সবরি কলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

কলা এমন এক ধরণের ফল যা সারাবছরই পাওয়া যায়। আর এই ফলের যে পুষ্টিগুন রয়েছে তা শেষ করা যাবে না। যে কোন বয়সের মানুষ ছোট থেকে বড় যে কেউ এই ফলের পুষ্টিগুন নিতে পারে আনায়াসে। এই ফল মানুষের শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হজম ক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা করে। কলায় প্রচুর পরিমানে ফাইবার বা আঁশ ও শর্করা রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীরা কলাকে মিষ্টি ফল মনে করে খেতে দ্বিধায় থাকেন। 
  

কিন্তু কলা আমাদের শরীরের রক্তের চিনির পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং ইনসুলিন হরমোনের প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা বাড়ায়। কলায় থাকে পেকটিন নামক একধেণের ফাইবার যা কোষ্টকাঠিন্য দূরিকরণে সাহায্য করা। এছাড়াও কলা খেলে কোন প্রকার এলার্জি জনিত কোন সমস্যা হয় না উল্টো কলা খেলে এলার্জিজনিত সমস্যা থাকলে তা দূর হয়ে যায়। কলা আমাদরত স্বাস্থ্যগত দিক থেকে অনেক উপকারে আসবে।

সূচীপত্রঃ প্রতিদিন কলা খেলে যে সকল উপকার পাবেন-

পরিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধি 

আমরা প্রতিনিয়ত যে সকল খাবারগুলো খায় তাতে আমরা আমাদের শরীরে গ্যাষ্ট্রো-ইনটেষ্টাইনাল অঙ্গগুলোয় অনেক সময় প্রদাহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আপনি যদি কলা খান তাহলে আপনার কোন প্রকার গ্যাষ্ট্রো-ইনটেষ্টাইনাল অঙ্গগুলোয় প্রদাহ তৈরি হয় না। কলায় থাকে একধরণের প্রতিরোধী স্টার্চ, যা পরিপাক না হয়ে সরাসরি বৃহদন্ত্রে গিয়ে পরিপাক হয়। যাতে পরিপাকে কোন প্রকার সমস্যা তৈরি হয় না। 

ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ

আমরা অনেকেইজানি কলাতে ভিটামিন বি৬ রয়েছে। আমরা যদি গড়ে একটি কলা খায় তাহলে আমাদের শরীরে ভিটামিন বি৬-এর দৈনন্দিন চাহিদার পাঁচ ভাগের এক ভাগ পূরণ করতে পারে। দেহে অ্যামিনো  অ্যাসিড, হিমোগ্লোবিন, ইনসুলিন, কোষ উৎপাদনে এই ভিটামিন বি৬ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ও প্রয়োজনীয় । আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর ১৫ শতাংশ চাহিদা কলাই পূরণ করে থাকে।

মানসিক চাপ কমে

কলার মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড, যা মনুষের মানসিক চাপ রোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। এছাড়াও কলায় বেশ অনেক ধরণের উপাদান রয়েছে তার মধ্যে ট্রিপ্টোফ্যান অন্যতম। মানসিক চাপ কমাতে যে হরমোন কাজ করা মূলত এই ট্রিপ্টোফ্যান। যা আমরা কলাতে পেয়ে থাকি। এছাড়া প্রতিটি কলায় গড়ে প্রায় ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে। মন ভালো রাখতে ও ঘুম ভালো হওয়ার জন্য ম্যাগনেশিয়াম খুবি প্রয়োজন।

রক্তচাপ স্বাভাবিক করে

আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী বেড়েই চলেছে। তার মধ্যে যারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তারা প্রায় ৪৫ এর নিচে। এমন পরিস্থিতিতে এইসব রোগীদের প্রত্যেকের প্রতিদিন একটি-দুইটি করে কলা উচিত। কলায় থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপকে কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। 

ওজন কমায় 

কলা মূলত ভারি ধরণের খাবার। যেহেতু কলায় প্রচুর পরিমানে আঁশ বা ফাইবার ও শর্করা থাকে সেহেতু কলা খেলে পেট ভরা লাগে ফলে খুদা কম লাগে। যার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া কমে এবং ওজন বাড়তে পারে না। মূলত আমাদের শরীরে যদি ইনসুলিনের পরিমাণ বেড়ে যায় তাতে আমাদের শরীরের ওজনও বেড়ে যায়। কিন্তু কলা আমাদের শরীরের রক্তের চিনির পরিমাণ কমিয়ে ফেলে যাতে ইনসুলিন ও কমে যায়। 

ত্বকের স্বাস্থ্য

কলায় ভিটামিন সি এর পরিমাণ ঠিক তেমন বেশি না। আগেই বলেছি আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর ১৫ শতাংশ চাহিদা কলাই পূরণ করে থাকে।কলায় ভিটামিন সি ের পরিমাণ সাইট্রাস ফলের মতো বেশি নয়, কিন্তু এটি সমগ্র ত্বকের স্বাস্থ্যে অবদান রাখে। এছাড়াও কলা খাওয়া শেষে কলার খোসা মুখে লাগাতে পারেন এর ফলে একদিকে যেমন আপনার ত্বকের রোগের প্রকোপ কমবে ঠিক তেমনি অপরদিকে আপনার ত্বকের হারিয়ে যাওয়া ঔ্রজ্জ্বল্য ফিরে পাবেন খুব দ্রুত। 

চোখের স্বাস্থ্য

দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে অর্থাৎ দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে হলে অবশ্যই কলার কোন বিকল্প নেই বললেই চলে। কলাতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম আরোও নানারকম ভিটামিন শরীরে প্রবেশ করে চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। সেই সাথে রেটিনার ক্ষমতা এতোটাই বৃদ্ধি পায় যে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বা অন্য কোন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বনা বললেই চলে। কলায় শুধু ভিটামিন বি, সি নয় ভিটামিন এ ও আছে। কলায় ভিটামিন এ রয়েছে যা সুস্থ চোখ বজায় রাখতে সাহায্য করে। দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখতে প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান কলা।  

শক্তি বৃদ্ধি

কলায় থাকা পটাশিয়াম মূলত আমাদের শরীরের মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প হওয়া থেকে রক্ষা করে। এছাড়া কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করা থাকে যার ফলে ভারী অনুশীলন করে শক্তিশালী হওয়া যায়। এছাড়াও কলায় র‍য়েছে ডায়াটরি ফাইবার যা খুবই দ্রুত গতিতে হজম হয়ে আরো গ্লুকোজ তৈরি করে প্রচুর শক্তি যোগাব দেয়।

রক্তাপ্লতা বা অ্যানিমিয়া ঝুঁকি কমে

আমাদের শরীরে অনেক সময় রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার (RCB) সংখ্যা বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। যার ফলে আপনার শরীরে ক্লান্তিবোধ আসবে, শরীর ফ্যাকাশে লাগবে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যেহেতু কলায় প্রচুর পরিমাণে আয়রণ থাকে সেহেতু আয়রণ রক্তে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। এছাড়াও কলায় ভিটামিন বি৬ রয়েছে যা গ্লোকোজের পরিমাণ বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

আলসার ভালো করতে

পেটে আলসার হলে অবশ্যই কলা খান। আমরাজানি, কলায় প্রচুর ফাইবার ও আয়রন রয়েছে। মিউসিলেজ পাকস্থলির ভেতরের প্রাচীরের ক্ষতিগ্রস্থ মিউকাস পর্দাকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে এই কলা। কারণ এই কলার ফাইবার গ্যাস্ট্রিক হওয়ার থেকে দূরে রাখে। 

ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে

কলা ক্যান্সার প্রতিরোধ সাহায্য করে। কলাতে রয়েছে বিশেষ ধরণের প্রোটিন যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে।কলা বেশি পাকলে তাতে TNF-A নামক একধরণের যৌগ আছে যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্বেত রক্ত কণিকার (WBC) পরিমাণ বাড়ায়। এতে ব্লাড ক্যান্সার হোয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়

কলাতে রয়েছে ভরপুর পুষ্টিগুন। কলায় রয়েছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর কাজকে ভালো করতে সহযোগিতা করে। প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে আপনার মস্তিষ্কের নার্ভগুলো সক্রিয় থাকে এতে আপনার স্মৃতিভান্ডার শক্তিশালী হবে অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আপনি প্রতিদিন একটি ব্লেন্ডারে খোসা ছাড়িয়ে একটি কলা, পাঁচটি কাঠবাদাম,এক কাপ নারিকেল তেল মিক্স করে যে পানীয় তৈরি হবে সে পানীয় প্রতিদিন পান করলে আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য হবে।

কিডনি সুস্থ্য রাখতে

কলায় রয়েছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম যা কিডনির কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহযোগিতা করে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে ব্যাক্তি প্রতিদিন কলা খায় তার কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ ভাগ কম। এছাড়াও কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

আমাদের শেষ কথা

আশাকরি আপনি ভালোভাবে কলার উপকারিতা বিষয়ে ভালো একটি ধারণা লাভ করেছেন। আপনি যদি ওপরোক্ত কোন রোগে ভুগে থাকেন অবশ্যই কলার খেয়ে কলার উপকারিতা নিবেন। কালা অনেক রোগের প্রোকোপ থেকে রক্ষা করে তাই অবশ্যই প্রতিদিন একটি করে কলা খাবেন এবং নিজের শরীর সুস্থ্য রাখার চেষ্টা করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আবির ইনফো টেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url