ঘরে বসে মাশরুম চাষ করার ১০টি কার্যকরী ট্রিকস ও লাখ টাকা আয়ের গ্যারেন্টি

মাশরুম নামক ছত্রাক খুবই উপকারি একটি পুষ্টিকর খাবার। মাশরুমে রয়েছে হায়-প্রোটিন। যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। মাশরুম হজম হয় তাড়াতাড়ি। এই মাশরুমে হায়-প্রোটিন ছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজপদার্থ। এই মাশরুমের চাহিদা আজ সারা বিশ্বব্যাপি। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আজ বিদেশেও এর চাহিদা ব্যাপক।
ঘরে বসে মাশরুম চাষ করার ১০টি কার্যকরী ট্রিকস ও লাখ টাকা আয়ের গ্যারেন্টি

তাই অনেক বেকার যুবকের আয়ের উৎস হয়ে দাড়িয়েছে এই মাশরুম। লাখ লাখ টাকা আয় কর‍ছে এই মাশরুম চাষে। নিজে স্বাবলম্বি হয়ে অন্যকে স্বাবলম্বি করে তুলছে এই মাশরুম চাষ। আমরা এই পোস্টে কীভাবে ঘরে বসে মাশরুম চাষ করবেন, কীভাবে বাজারজাত করে লাখ টাকা আয় করবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করব এই পোস্টে।

সূচীপত্রঃ ঘরে বসে মাশরুম চাষে লাখ টাকা আয়

ঘরে বসে জানুন সঠিক মাশরুম চাষের জাত ও উপকরণ

আমাদের দেশের আবাহাওয়ার প্রেক্ষিতে ঘরে বসে তুলনামূলক সহজ পদ্ধতিতে ঘরে বসে চাষযোগ্য মাশরুম হলো অয়েস্টার, প্যাডি স্ট্র, মিল্কি জাতীয় মাশরুম। এর মধ্যে সময় উপযোগী মাশরুম রয়েছে। অয়েস্টার মাশরুম চাষ করার উপযুক্ত সময় শীতকাল। আর বাকি দুটোর অর্থাৎ প্যাডি স্ট্র, মিল্কি চাষের উপযুক্ত সময় মার্চের পর থেকে,যখন ঠান্ডা কমে যায়। মাশরুম চাযের জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। যা দিয়ে আপনি ঘরে বসেই আপনার বাড়িকে কাজে লাগিয়ে চাষ করতে পারবেন।    

মাশরুম চাষে প্রধাণত চারটি উপকরণ প্রয়োজন। সেগুলো হলো:স্পন, মাশরুমের বীজ, খড় ও পলিথিনের ব্যাগ। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আপনার নিকটস্থ কৃষি বিপনন কেন্দ্র অথবা মাশরুম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা অনলাইন শপিং সাইট যেগুলো কৃষি ও খামার জাতীয় সেক্টর নিয়ে কাজ করে থাকে সেখান থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন। বাকি খড় ও পলিব্যাগ আপনাে হাতের নাগালেই পেয়ে যাবেন।

ঘরে বসে মাশরুম চাষের সঠিক পদ্ধতি

মাশরুম চাষ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে আধ ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে তা পুরোপুরি জীবানুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত গরম পানিতে প্রায় বিশ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিন। তছাড়াও আপনি আরেকটি উপায়ে জীবানুমুক্ত করতে পারেন তা হলো একটি পাত্রে পরিষ্কার পানি নিয়ে তাতে ব্লিচিং পাউডার ও চুন মিশিয়ে তার মধ্যে খড় ভিজিয়ে ২৪ ঘন্টা রেখে দিন। এরপর ফুটোন্ত পানি থেকে অথবা ভেজানো পানি থেকে খড়গুলোকে এমনভাবে ঝরিয়ে নিতে হবে যাতে খড়ে চাপ দিলে পানি বের না হয়।

আবার একেবারে শুকনোভাব না চলে আসে। হাত দিলে যেন ভেজা ভেজা ভাব বোঝা যায়। এরপর একটি পলিব্যাগ নিন । সেই পলিব্যাগের মধ্যে দুই ইঞ্চি পুরু করে তার মধ্যে খড় বিছিয়ে তার উপর ব্যাগের ধার ঘেঁষে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর বীজের উপর আবার খড় ও খড়ের উপর আবার বীজ দিতে হবে। ঠিক একি প্রক্রিয়ায় সাত থেকে আটটি স্তর তৈরি করে পলিব্যাগের মুখ কয়েকটা প্যাঁচ দিয়ে ভালোভাবে গিঁট বেধে বন্ধ করে দিন।

যখন খড় বিছাবেন তখন খড় হাত দিয়ে ভালোভাবে চেপে দিন যাতে কোন প্রকার হাওয়া জমে না থাকে। এরপর পলিব্যাগে দশ থেকে বারোটা ছিদ্র করে নিন এবং সেই ছিদ্রের মুখে তুলা দিয়ে মুখগুলো বন্ধ করে দিন। এতে হাওয়া চলাচল স্বাভাবিকভাবে বজায় থাকবে। আবার এই তুলা দিয়ে মুখ ঠাকার কারণে বাইরের কোন প্রকার আবর্জনা প্রবেশ করতে পারবে না। পলিব্যাগের প্যাকেটটি দশ থেকে বারো দিনের জন্য কোন অন্ধকার জায়গায় রেখে দিন। খেয়াল রাখবেন সেই স্থানে যেন বায়ু চলাচল স্বাভাবিক থাকে।

এছাড়াও জায়গাটি অবশ্যই পরিষ্কার ও পোকা-মাকড়মুক্ত রাখতে হবে। মনে রাখবেন, মাছি কিন্তু মাশরুম চাষে অনেক ক্ষতি করে। কয়েকদিনের মধ্যে লক্ষ্য করবেন সেই প্যাকেটে বীজের জায়গায় সাদা আস্তরণ দেখা যাবে। এই সাদা আস্তরণকে বলে মাইসেলিয়াম। এই মাইসেলিয়াম অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পোরি ব্যাগ জুড়ে ভরে যাবে। মাইসেলিয়াম ভরে যাওয়ার সাথে সাথে তুলা গোলো পলিব্যাগের মুখের ছিদ্র থেকে সরিয়ে নিন। সেই সাথে আরো বেশ কয়েকটি ছিদ্র করে নিন।

ছিদ্র করে পলিব্যাগটিকে কিছুটা আলো মধ্যে রেখে দিন। তবে সরাসরি রোদে নয়। আপনি ঘরে বসে আপনার জানালা খুলে সেই আলোতে বই পড়তে পারবেন এমন আলোতে পলিব্যাগটি রেখে দিন। আপনার পরিবেশের বাতাসে আর্দ্রতা বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী প্যাকেটের উপর মাঝে মাঝে জল স্প্রে করবেন। এর কয়েকদিনের মধ্যে দেখবেন পলিব্যাগের ছিদ্র দিয়ে মাশরুমের পিনহেড উঁকি দিবে। সাধারণত পঁচিশ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার মতো পরিণত হয়ে যায়। মনে রাখবেন একটি পলিব্যাগ থেকে তিনবার ফলন পাওয়া যায়।

বাটন মাশরুম চাষের সঠিক পদ্ধতি  

বাংলাদেশে অনেক কয়েকটি জাত রয়েছে যা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। তার মধ্যে বাটন মাশরুম অন্যতম ও লাভজনক মাশরুম। এটি বাংলাদেশে বোতাম মাশরুম নামেও পরিচিত। এই মাশরুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রচুর পরিমানে এই বাটন মাশরুম চাষ করা যেতে পারে। অনেক মাশরুম চাষি এইসকল মাশরুম বিদেশে রপ্তানি করা লাখ লাখ টাকা ইনকাম কর‍ছেন। এই মাশরুম ৫টি ধাপে চাষাবাদ করা যায়।
  • মাশরুমের স্পন উৎপাদন
  • কম্পোস্ট তৈরি
  • স্পনিং করা
  • মাটির আবরণ বা মাটি কেসিং
  • ফসল সংগ্রহ

মাশরুমের স্পন উৎপাদন

স্পন হলো মূলত মাশরুম বাড়ানোর জন্য মাইসেলিয়াম দিয়ে তৈরি একপ্রকার মাধ্যম। এটি ক্রমবর্ধমান মাশরুমের বেস বা ভিত্তি। স্পন উৎপাদনের জন্য বাটন মাশরুম জাতের মাইসেলিয়াম জীবানুমুক্ত মিডিয়ামের (মাধ্যম) উপরে স্থাপন করতে হবে।স্থাপন করার পর মাইসেলিয়াম সম্পূর্ণভাবে মিডিয়ামের মধ্যে বেড়ে উঠবে। এই যে মাইসেলিয়াম ও মিডিয়ামের মিশ্রণকেই মূলত বলা হয় স্পন। এই স্পনটি নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে উৎপাদন করা যায় আবার বিচিন্ন মাশরুম কালচার প্রতিষ্ঠান থেকেও কিনতে পাওয়া যায়।

কম্পোস্ট তৈরি 

কম্পোস্ট হলো স্পন বৃদ্ধি করার জন্য একটি কৃত্রিম মাধ্যম। এই মিশ্রণ তৈরি করা হয় খড়, মুরগির বিষ্ঠা, সার, পানি যুক্ত করে। এই কম্পোস্ট তৈরির দুটি পদ্ধতি বয়েছে। একটি সংক্ষিপ্ত অপরটি দীর্ঘায়িত। কথায় আছে অল্পবিদ্যা ভয়ংকর ঠিক এখানেও কিছুটা মিল রয়েছে। সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে সময় কম লাগে কিন্তো এই পদ্ধতিটা অনেক ব্যায়বহুল। কারন কম্পোস্টে উপস্থিত জীবানুগুলোকে মেরে ফেলার জন্য এবং কম্পোস্ট থেকে উৎপন্ন এমোনিয়াকে মাইক্রোবিয়াল প্রোটিনের রূপান্তর করতে হয়। 

আর দীর্ঘায়িত পদ্ধতিতে খড় কেটে পানিতে ভিজিয়ে তারপর মুরগির বিষ্ঠা এবং তারমধ্যে কিছুটা পানি দিয়ে তা মিশ্রিত করতে হবে। মিশ্রণটি ৩-৫ ফুট উঁচু স্তুপ করে রাখা হয়। এই মিশ্রণটি মাঝে মাঝে উল্টেপাল্টে দিতে হয়। মিশ্রণ তৈরির ৭ম দিনে মিশ্রণটিকে ভালোভাবে উল্টেপাল্টে দিতে হবে। একইক্রমে ১৪ ও ২১ তম দিনে উল্টেপাল্টে দিতে হবে। এরপর ২৮ তম দিনে উক্ত মিশ্রণে জিপসাম যুক্ত করে তা আবার ভালোভাবে উল্টেপাল্টে দিতে হবে। 

ঘরে বসে মাশরুম চাষ করার ১০টি কার্যকরী ট্রিকস ও লাখ টাকা আয়ের গ্যারেন্টি

৩২ ও ৩৫ তম দিনে কীটনাশক মিশিয়ে তা আবারো ভালোভাবে উল্টেপাল্টে মিশিয়ে দিতে হবে। ঠিক ওইদিন অ্যামোনিয়ার গন্ধ পরীক্ষা করতে হবে। যদি অ্যামোনিয়ার কোন প্রকার গন্ধ না থাকে তাহলে কম্পোস্ট স্পানিংয়ের জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেছে। তারপরও ৩দিন পর আবারো অ্যামোনিয়া গন্ধ পরীক্ষা করতে হবে। যদি কোন প্রকার গন্ধ না পাওয়া যায় তাহলে সেটা ব্যবহারের জন্য একেবারে উপযুক্ত।

স্পনিং

স্পনিং ব্যাপারটা হলো স্পনকে সমানভাবে কম্পোস্টের সাথে মিশ্রিত করার একটি প্রক্রিয়া। এই সুবিধাজনক প্রক্রিয়াটি ২ টি উপায়ে করা যেতে পারে। ১.স্পট স্পনিং ২.সারফেস স্পনিং। 

স্পট স্পনিং: স্পট স্পনিং হলো মূলত এর মধ্যে কম্পোস্টের দলা তৈরি করে হাত বা কাঠির সাহায্যে তা কম্পোস্টে গর্ত করে স্পন মিশ্রণ করা হয়।

সারফেস স্পনিং: সারফেস স্পনিং বিষয়টা হলো কম্পোস্ট এর একটি লেয়ার বানিয়ে এর উপরে স্পন ছড়িয়ে দেওয়া এবং ৩-৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উপরেরে পৃষ্ঠে আবার কম্পোস্টে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

মাটির আবরণ বা মাটির কেসিং 

মাইসেলিয়ামের যথাযথ বৃদ্ধি এবং কম্পোস্টের অভ্যন্তরের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য মাটির আবরণ বা কেসিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত স্পনিং এর ১২ থেকে ১৪ দিনের এটি করতে হয়। ৪:১ অনুপাতে দোঁয়াশ মাটি এবং বালিমাটি কেসিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। 

ফসল সংগ্রহ

মাটির আবরণ বা মাটির কেসিংয়ের ১৪ থেকে ২১ দিন পরে মাশরুম কুড়ি বের হতে শুরু করবে এবং ৭-৮ দিনের মাথায় বাটন আকার ধারণ করবে। আর সেই মাশরুম ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে কাটার উপযোগী হয়ে যাবে। 

মাশরুম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ  

আপনি কোন কটা কাজ শুরু করবেন তার জন্য অবশ্যই প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। যে কাজ আপনি আগে কখনোই করেননি বা সামান্য পূর্বজ্ঞান রয়েছে তা নিয়ে কখনোই সে কাজটি করা ঠিক হবে না। কারণ যতক্ষণ না আপনি সেই কাজটি নিজের হাতে করছেন বা নিজের চোখে না দেখছেন ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার সম্পূর্ণ কোন ধারণা আসবে না। আর যতক্ষণব না আপনার সম্পূর্ণ ধারণা না আসে আপনি সেই কাজে সফল হতে পারবেন না। তাই আপনার দরকার সর্বপ্রথম প্রশিক্ষণ।

মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রতি কর্ম দিবসে মাশরুম অবহিতকরণ ও কার্যক্রম প্রদর্শন শীর্ষক অনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষন প্রদান করে থাকে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫-৩০ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। যদি আপনার দূরে কোথাও প্রশিক্ষণকেন্দ্র হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে আবাসন সুবিধাভোগ করতে পারেন। সে জন্য আপনাকে স্থানীয় কৃষি অফিসের সুপারিশ সংবলিত একটি আবেদনপত্র উক্ত অর্থাৎ যেখানে আপনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন সেই ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক বরাবর আবেদনটি জমা দিতে হবে। 

উক্ত প্রশিক্ষণ শেষে একজন মানুষ কীভাবে মাশরুম চাষ, বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করবে সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে যাবে। এছাড়াও আপনি চাইলে অনলাইনেও সে সকল কোর্স বা ইউটিউবে ভিডিও দেখে শিখতে পারেন তবে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নেওয়াটা সবথেকে ভালো বলে আমি মনে করা থাকি।

মাশরুম চাষের জন্য পুঁজির হিসাব

কোন একটা কাজ শুরু করার আগে সেই কাজের জন্য একটা বাজেট নির্দিষ্ট করা হয়। ঠিক মাশরুম চাষের জন্যও আপনাকে একটা পুঁজি নির্দিষ্ট করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক করতে হবে আপনি প্রতিদিন কী পরিমান মাশরুম উৎপাদন করবেন। মাশরুম চাষের রয়েছে বেশ কয়েকধরণের পদ্ধতি। আপনি ঘরে বসেই ছোট্ট পরিসরে মাশরুম চাষ করতে পারেন তা আমরা উপরেই আলোচনা করেছি। আবার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও আপনি চাইলে একইভাবে চাষ করতে পারেন।

প্রাথমিকভাবে ৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা হলে মাশরুম চাষ শুরু করা সম্ভব। আপনি ঘরে বসেই বীজ উৎপাদন করতে পারবেন। সেইজন্য আপনাকে স্টেরিলাইজেশন কাম ইনোকুলেশন চেম্বার ব্যবহার করতে হবে। এই যন্ত্রটি আপনি মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে ব্যবহার করলে ১২,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হবে। এই যন্ত্রটি ব্যবহারের সুবিধা হলো এই যন্ত্রটি একই সঙ্গে বীজ জীবানুমুক্তকরণ ও বীজ প্রতিস্থাপন করা যায়। এছাড়াও এই যন্ত্রটি অটোক্লেভ ও ক্লিনবেঞ্চের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও স্পন প্যাকেটও এই যন্ত্র দিয়ে তৈরি করা যায়। এতে ৭,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা খরচ হতে পারে।

মাশরুম উৎপাদনে ক্যালেন্ডারের অনুসরণ

মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক মাশরুম উৎপাদন ক্যালেন্ডার প্রদান হয়ে থাকে। যা আপনার মাশরুম চাষ করাকে আরও লাভবান করে তুলবে। উৎপাদন ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে চাষ করলে সারা বছর ভালো ফলন পাওয়া যায় বিধায় লাভবান হওয়া সম্ভব। এই মাশরুম উৎপাদন ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে চাষ করলে শীত ও গ্রীষ্মে ফলনের পার্থক্য কমানো সম্ভব।

মাশরুম চাষের বর্তামান ও ভবিষ্যৎ বাজার সম্ভাবনা

মাশরুম বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে ও ভবিষ্যতে অনেক বড় অবদান রাখছে ও রাখতে চলেছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০ থেকে ৪১ হাজার মেট্রিক টন মাশরুম প্রতিবছর উৎপাদন হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রায় অনেকদেশেই এই মাশরুন রপ্তানি হচ্ছে। যা অর্থনীতিকে সচল করতে সাহায্য করছে। বর্তমানে মাশরুম চাষিরা অয়েস্টার মাশরুম রপ্তানি শুরু করেছে। এসব শুকনা মাশরুম মালেশিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্নদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

এছাড়াও আমাদের দেশে বড় বড় শহরগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বড় বড় হোটেল-রেঁস্তোরা।এই রেঁস্তোরাগুলোতে মাশরুমের চাহিদা ব্যাপক। এই রেঁস্তোরাগুলোতে মাশরুমের স্যুপ বিভিন্ন রেসিপি তৈরি করা হয়। এছাড়াও দেশে বসবাসরত বিদেশীরাও এই মাশরুমের ব্যাপক ব্যবহার করে থাকে। আবার দেশের স্থানীয় কাঁচাবাজার, সুপারশপ, ফ্রাইশপসহ বিভিন্নস্থানে এই মাশরিমের কারবার গড়ে উঠেছে। 

রপ্তানির সাথে সাথে ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। বেকার যুবক-যুবতি, গৃহিণী সহ অনেকেই প্রশিক্ষণ গ্রহনের মাধ্যমে নিজে উদ্যোক্তা হিসেবে চাষ করতে পারেন মাশরুম। যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো প্রভাব ফেলবে। মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ ও খাবার হিসেবে জনপ্রিয় করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পুষ্টি উন্নয়ন ও দরিদ্র হ্রাসকরণ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০২৩ থেকে ২০২৭ ৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের মোট বাজেট ৯৬ কোটি টাকা।

মাশরুম চাষে সাবধাণতা অবলম্বনের উপায়

যদিও মাশরুম চাষে সেইরকম কোন কিছুর উপদ্রপ না থাকলেও অরগানিক বা জৈব উপায়ে মাশরুম চাষের ক্ষেত্রে মাশরুমে মাছির উপদ্রপ দেখা দিলে বিভিন্ন প্রকার লাইট ট্রাপ ব্যবহার করে তা দমন করে যেতে পারে। এছাড়া মাশরুমে সবুজ বাদামী বা নীল মোল্ড দেখা দিলে লবণ দ্বারা আক্রান্ত স্থান কাভার করে দিয়ে তা দূর করা যায়। আর অবশ্যই আলোর তারতম্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যাতে কোন প্রকারের বেশি পরিমাণে আলো না প্রবেশ করে।  

মাশরুম চাষে ঝুঁকির সম্ভাবনা

মাশরুম চাষের জন্য যে সকল যন্ত্রপাতি বর্তমানে ব্যবহার করা হয় তাতে কোন প্রকার ঝুঁকি নেই। যেহেতু এটা ঘরের ফসল অর্থাৎ ঘরে চাষ করা হয় এতে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা নেই সেহেতু এই ফসল চাষে কোন প্রকার ঝুঁকি নেই বললেই চলে। মাশরুম চাষে খুবই কম সময়ে দ্রুত ফলন পাওয়া সম্ভব এতে বিনিয়োগকৃত অর্থ অল্পসময়ে তুলে আনা সম্ভব।   

আমাদের শেষ কথা   

আশাকরি মাশরুম চাষে পদ্ধতি,বাজার সম্ভাবনা.ঝুঁকি,সাবধানতাসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে জানতে পেরেছেন। আপনি চাইলে উক্ত পদ্ধতি বব্যহার করে ঘরে বসেই আপবার বাসাবাড়িকে কাজে লাগিয়ে মাশরুম চাষ করতে পারেন। আপনি বেকার অথবা কোন কাজ করে থাকলে তার পাশাপাশি বাড়তি কিছু আয়ের জন্য এই মাশরুম চাষ হতে পারে আপনার জন্য সর্বোত্তম। আবার এই মাশরুম চাষই হতে পারে আপনার আয়ের একমাত্র উপায়। তাই আপনিও শুরু করুন আপনার জীবিকা নির্বাহের অন্যতম দিক মাশরুম চাষ।

এইরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কারণ আমরা আমদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরণের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আবির ইনফো টেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url