শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসার ৭টি লক্ষণ ও অভিভাকের করণীয়
abirinfotech
১৮ জুল, ২০২৪
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসা সাধারণত শিশুরা ভাইরাসজনিত কোন কিছুতে সংক্রমিত হলে জ্বরে
ভোগে। জ্বর মূলত দেহের একটি প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া। শরীরে জীবানু প্রবেশের পর
শরীর তার বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তোলে এই জ্বরের মাধ্যমে। তবে এ কথা সত্য যে, ঘন ঘন
জ্বর আসাও
ঠিক ভালো কিছুর লক্ষণ নয়। এই সময় শিশু অন্য কিছুতে আক্রান্ত কিনা তা ভালোভাবে
অভিভাবকদের জানা দরকার। কোন কারণে ঘন ঘন জ্বর শিশুর শরীরের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া বা
ভাইরাসের কোন ধরণের আক্রমণ এর ফলে সমস্যা সৃষ্টি করছে বা ইনফেকশন হয়েছে কিনা তা
বুঝতে হবে।
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসার অন্যতম কারণ দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকা।
আমাদের দেশের শিশুদের মাঝে দেখা যায় তারা প্রায় রোগ প্রতিরোধ কম ক্ষমতার অধিকারী
হয়ে থাকে। জন্মের পর থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও অনেক শিশু
পুষ্টিহীনতায় ভোগে। তাদের দেহে পরিমান মতো পুষ্টি না থাকার কারণে জীবানু খুব
সহজেই আক্রমণ করতে পারে। জ্বরের কারণে মায়েদের অবশ্যই প্রতিরোধমূলক বব্যস্থা জানা
থাকতে হবে। যে কোন সময় শিশুরা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
জ্বর বিভিন্নভাবে শিশুদের শরীরে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। পরিবেশগত সমস্যা
অনেকটা প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্যাঁতস্যঁতে ও নোংরা পরিবেশে শিশুকে রাখলে সেখান
থেকে খুব সহজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভানবা থাকে।
এছাড়াও শিশুর পেটের বিভিন্ন ধরণের সংক্রামণ, সর্দি-কাশি লেগে থাকা,
রক্তাস্বল্পতার মতো সমস্যার কারণে শিশুর ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে। এছাড়াও যেসকল
বাচ্চাদের টিকা নিয়ে থাকে অথাবা ফোড়া হয়ে থাকে তাহলে জ্বর আসতে পারে। তবে সে জ্বর
মূলত ব্যাথার কারণে হয়ে থাকে।
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসা অনেক কারণেই আসতে পারে। এর মধ্যে সবথেকে বেশি জ্বর আসে
ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে। ভাইরাস শিশুদের শরীরে যে কোন ভাবে
যদি প্রবেশ করে তাহলে একেরপর এক রোগ শরীরের বাধা সৃষ্টি করতে শুরু করে। সেই সকল
রোগের কারণেও শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসে। ঘন ঘন জ্বর আসা খুব ভালো একটা বিষয়
নয়। এমনটাই চিকিৎসকরা দাবি করে থাকে। শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসার কারণসমূহ নিচে
আলোচনা করা হলো-
অনেক সময় শিশুদের মূত্রতন্ত্রের ত্রুটির কারণে প্রসাবের সংক্রমণ হয় যার ফলে
বারবার জ্বর আসে। এই সংক্রমণের চিকিৎসা শুরু থেকেই করাতে হবে নাহলে পরবর্তীতে
বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা শিশুর জন্য অনেক কাষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে
পড়বে।
অনেক শিশুর ঠান্ডাজনিত কারণে, ঠান্ডাজনিত কোন খাবার খাওয়ানোর ফলে, ঠান্ডা
পানিতে গোসোল করালে ঘন ঘন জ্বর আসে।
যেসব শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে বারবার ভোগে, সর্দি-কাশিতে ভোগে তারা বেশির ভাগ
সাইনাস ইনফেকশন বা কানপাকায় আক্রান্ত হয় বারবার। যার কারণে অনেকসময় জ্বর আসে।
বাচ্চাদের অনেকসময় এলার্জি বের হয়ে থাকে। এই এলার্জিজনিত কারণেও ঘণ ঘন জ্বর
আসে। বিভিন্নধরণের খাবারের কারণেও ঘন ঘন জ্বর আসে।
শিশুদের ফুসফুসে যদি কোন কারণে পানি চলে আসে তাহলে ঘন ঘন জ্বর আসে। এছাড়াও
নিউমোনিয়া বা কিডনির মতো সমস্যা থাকলেও ঘন ঘন জ্বর আসে।
ফুসফুসে যখন পানি জমে তখন কিছুদিন পর পর খুব ঘন ঘন জ্বর আসে। এই অবস্থায় সাথে
সাথে বাচ্চা কে চিকিৎসার আয়তায় এনে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
অনেক শিশুর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া হলে বুঝতে পারেনা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
সেক্ষেত্রেও কিছুদিন পর পর খুব ঘন ঘন জ্বর আসে। সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার
আয়তায় আনতে হবে।
অনেক সময় শিশুদের হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে। অনেকের সেটা জন্মগত আবার পরবর্তীতে
হয়ে থাকে। সেজন্যও ঘন ঘন জ্বর আসে।
ঘন ঘন জ্বর হয় কোন ভিটামিনের অভাবে
ভিটামিন হলো খাদ্যের জরুরি কিছু ছোট জৈব অণু। ভিটামিনের অভাবে শরীরে অনেক সমস্যার
সৃষ্টি হতে পারে। মূলত ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের বা বড়দের ঘন ঘণ জ্বর আসে।
কারণ ভিটামিন ডি এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো শরীরের চাহিদা মিটিয়ে
থাকে। এই ভিটামিন ডি তে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। যা দেহের ক্যালসিয়াম ও
ফসফরাসের এর ঘাটততি পুরণ করে। এক গবেষণায় জানা গেছে ভিটামিন ডি ক্যান্সার হওয়ার
সম্ভাবনা দূর করে।
ভিটামিন ডি এর অভাব হলে যে শুধু ঘন ঘন জ্বর হয় তা নয় ক্যান্সার হওয়ার সমম্ভাবনা
বাড়িয়ে দেয় এবং অন্য সকল রোগের সংক্রমণের হারও বাড়িয়ে দেয়। বাচ্চাদের বেশি বেশি
ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। এছাড়াও মায়েরা বেশি বেশি ভিটামিন
ডি জাতীয় খাবার খাবেন। কারণ মহিলাদের মধ্যে সবথেকে বেশি ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা
দেয়। যা শরীরের জন্য হুমকি স্বরুপ।
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর কিসের লক্ষণ
আবহাওয়া ও ঋতু বৈচিত্রের কারণে আমাদের দেশে মৌসুমি ভাইরাসজনিত জ্বরের লক্ষণ একটি
বেশি। বিশেষ করে এই ভাইরাসজনিত জ্বরের কবলে পড়ে তারাই যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
কম। যেমনঃ শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক। অনেক শিশুর ঘন ঘন জ্বর লেগেই থাকে। যার ফলে শরীরে
অনেক প্রাণঘাতী রোগের বাসা বাধে যা শিশুর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে বহিঃপ্রকাশ পায়।
তাই ঘন ঘন জ্বরের লক্ষণ জেনে নিলে সাথে সাথে আপনার বাচ্চাকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায়
আনতে পারবেন। চলুন এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-
যখনি জ্বর আসবে ঠিক দুই থেকে সাতদিন পর পর জ্বর ফিরে আসবে।
শিশুদের পেটে ব্যাথা শুরু করবে এবং তা দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী থাকবা। যারফলে
বাচ্চারা ছটফট করবে।
বাচ্চাদের চোখ দিয়ে পানি পড়া, অরুচি, দুর্বলতা, চোখ লাল হয়ে যাবে।
অনেক অভিবাকই শিশুর জ্বর হলে বেশ ঘাবড়ে যান। এতে বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে
ফেলেন অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে ভুল যে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন তাতে শিশুর ভালো না হয়ে
বরং ক্ষতির দিক বেশি হয়। এ সমস্যা সমাধানে আজ থেকে যে ৫টি কাজ থেকে বিরত থাকবেন
তা নিয়ে আলোচনা করব আশাকরি ধৈর্যসহকারে পড়বেন এবং উপকৃত হবেন।
গরম পানি:
জ্বর আসলে অনেক অভিভাবকই গরম পানি, দুধ এ জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়ান। এ বিষয়ে
চিকিৎসকরা বলেন গরম পানো খেলে সাময়িক আরাম মিললেও শরীরের তাপমাত্রার তেমন কোন
প্রভাব পড়ে না। তাই গরম পানি বেশি পরিমাণে না খাওয়ানোটাই উত্তম।
শরীরের তাপমাত্রা:
বাচ্চার শরীরে হাত দিয়ে শরীর গরম অনুভূত হলেই তা জ্বর নয়। অনেক অভিবাকিই এটাকে
জ্বর মনে করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো শুরু করে দেয়। তার
পূর্বে অবশ্যই থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে ওষুধের প্রয়োজন হলে তারপরই
খাওয়াবেন।
ওষুধের বব্যহার :
অনেক শিশুর অভিভাবক সামান্য জ্বর হলেই চিকৎসকের পরামর্শ ছাড়াই প্যারাসিটামল খাওয়ান। এতে আপনার বাচ্চার ভালোর দিক থেকে
খারাপ দিকের প্রভাব বেশি পড়তে পারে। বড়রা অনেকেই নিজেদের জন্য এমন ঝুঁকি নিয়ে
থাকেন কিন্তু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তা একদমি করবেন না। এতে আপনার বাচ্চার প্রাণ সংশয়ের কারণ হতে পারে।
গোসলের নিয়ম:
শিশুদের জ্বর হলেই সবথেকে বেশি যে ভুলটি করে থাকে তা হলো ভেজা কাওড় দিয়ে শরীর
মুছে শিশুকে গোসল না করানো। অর্থাৎ গোসল বন্ধ করে দেওয়া। চিকিৎসকরা বলছেন যে কোন রোগের ক্ষেত্রেই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।
ভারী পোশাকের বব্যহার:
জ্বর হলেই শিশুকে চাদর কিংবা ভারী কাপড় দিয়ে ঢেকে মুড়িয়ে রাখে। যা শিশুর জন্য
মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। অনেকেই মনে করেন ভারী পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখলে
ঠান্ডা কম লাগবে এতে শিশু আরাম পাবে। কিন্তু এতে শিশুর শরীরে ঘাম বসে শিশুর
অন্য সমস্যার সৃষ্টি হবে।
ঘন ঘন জ্বরের আড়ালে যা রয়েছে
শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসার পিছে যদি লক্ষণ জানা থাকে তাহলে সেটিকে অনেক সময় অনেক
রোগের উপসর্গ বলা যেতে পারে। এই ঘন ঘন জ্বরের পিছনে যদি কোন প্রাণঘাতি রোগ লুকিয়ে
থাকে তাহলে সেটি মারাত্মক হয়ে থাকে। এতে লিকোমিয়া(রক্তস্বল্পতা), পাকস্থলি, কিডনি
ও ক্যান্সারের মতি রোগ হতে পারে। যা হয়তো আপনার চোখের আড়ালেই আপানর বাচ্চার শরীরে
বাসা বেঁধে বসে থাকে। বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বরের আড়ালে অবশ্যই লুকিয়ে রয়েছে
প্রাণঘাতি রোগ।
এই প্রাণঘাতি রোগ সমূহ থেকে বাঁচতে অবশ্যই অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। পরবর্তীতে
কোন ধরণের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ হলে ঘন ঘন জ্বরের বিষয়ে অভিভাবককে
অবশ্যই উপযুক্ত বব্যস্থা নিতে হবে। কারণ যে কোন ধরণের ভাইরাস অর্থাৎ ফাঙ্গাস
ইনফেকশনের করণে এই ঘন ঘন জ্বর হয়ে থাকে। এছাড়াও কোন শিশুকে যদি সঠিক সময়ে টিকা না
দেওয়া হয় তাহলেও ঘন ঘন জ্বর আসেতে পারে। যা শিশুর জন্য বর্তমান ও ভবিষ্যতে খারাপ
প্রভাব ফেলে।
বাচ্চার শরীরে ঘন ঘন জ্বর আসা ভালো একটা লক্ষণ নয়। শরীরে ঘন ঘন জ্বর কিসের লক্ষণ
হলে এই ঠিক এই সময় আপনি একজন অভিভাবক হিসেবে যে সকল দায়িত্ব পালন করবেন তা নিয়ে
এই পয়েন্টে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশাকরি মনোযোগ দিয়ে পড়ে আপনিও আপনার সন্তানকে
ঠিক এইভাবে পরিচর্চা করবেন-
ঘন ঘন জ্বরের কারণে আপনার বাচ্চাকে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখার
চেষ্টা করবেন।
বাসায় যদি কেউ ধূমপান করে তাহলে তাকে অবশ্যই বাসায় ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ
করতে হয়ে।
বাচ্চাকে ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে তবে অতিরিক্ত ঘুম নয়।
পরিমান মতো পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।
ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে।
শরীরে বার বার ভাইরাস সংক্রমন হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ানো।
আমাদের শেষকথা
আশাকরি আজকের এই আর্টিকেল থেকে শিশুদের ঘন ঘন জ্বরের কারণ, লক্ষণ, করণীয় সহ আরো
অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন
অবশ্যই আপনার প্রিয়জন, বন্ধুদের শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিবেন। এইরকম
আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কারণ আমরা
আমদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরণের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
আবির ইনফো টেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url