ঘরে বসে মাত্র ২০ মিনিটে ইন্ডিয়ান ভিসা অবেদনের নিয়মাবলী

ভারতীয় ভিসা আজকাল আপনি ঘরে বসেই করতে পারবেন। ভারত ভ্রমণ বাংলাদেশর মানুষের কাছে সবচেয়ে আরামদায়ক ও রোমাঞ্চকর ভ্রমণ হয়ে থাকে ভারত ভ্রমণ। এই কথা মাথায় রেখে ভারতীয় সরকার অনলাইন ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এই জন্যই খুব সহজেই ঘরে বসেই করতে পারবেন এই অনলাইন ভিসা।

ঘরে বসে মাত্র ২০ মিনিটে ইন্ডিয়ান ভিসা অবেদনের নিয়মাবলী
অনলাইনে আপনি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। সেগুলো হলো: ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ই-ভিসা, ইন্ডিয়ান বিজনেস ই-ভিসা, ইন্ডিয়ান মেডিকেল ই-ভিসা, ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাটেন্ডন্ট ই-ভিসা। এই সকল ক্যাটাগরিতে আপনি নিবন্ধন করতে পারবেন। আজকেই এই আর্টিকেলে আমরা ভিসা নিবন্ধনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানবো।

সূচীপত্রঃ ঘরে বসে ২০ মিনিটে ইন্ডিয়ান ভিসার অবেদনের নিয়মাবলী 

ঘরে বসে ই-ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

সর্বপ্রথম আপনাকে ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। ivacbd.com ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নিচের দিকে কিছুটা স্ক্রল করতে হবর। স্ক্রল করার পর Apply Online লিখা আসবে সেখানে ক্লিক করতে হবে।

ক্লিক করার পর নতুন একটা উইন্ডোপেজে নিয়ে যাবে সেখানে একটা ফরম দেওয়া হবে। সেখানে আপনার কাছে কিছু ইনফরমেশন চাওয়া হবে। আপনি কোন দেশের, আপনার নিকটস্থ ইন্ডিয়ান মিশন অফিস, আপনার ন্যাশলাটি, জন্ম তারিখ/মাস/বছর, ইমেল আইডি, ভিসা টাইপ, কোন পারপাসে অর্থাৎ কোন উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন এগুলো সাবধাণতার সাথে পূরণ করে কন্টিনিউ এ ক্লিক করুন।

এরপর আবারো আপনার কাছে তথ্য চাওয়া হবে। যেগুলো সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আপনার নাম পাসপোর্ট অনুযায়ী, আপনার ডাকনাম(Given Name), জন্ম সাল, ঠিকানা, এনাইডি নাম্বার, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পাসপোর্ট নাম্বার, পাসপোর্ট নিবন্ধনের তারিখ ও মেয়াদির্ত্তীনের তারিখসহ যেই তথ্যগুলো চাওয়া হবে তা খুবই সাবধানতার সাথে পূরণ করেত হবে। কারণ আপনার সকল তথ্য তাদের কাছে জমা হচ্ছে। আপনি আপনার ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার পর আপনার তথ্যগুলো মিলিয়ে দেখা হবে এর পর তা সেভ এন্ড কন্টিনিউ এ ক্লিক করবেন।

এরপর পরবর্তীফর্মে আপনার চরিত্রের বিবরণ, অতীতেত ফৌজদারি মামলা আছে কিনা ইত্যাদি তথ্য জানতে চাওয়া হতে পারে সেগুলো ভালোভাবে পূরণ করতে হবে। পরবর্তীতে ভারত সরকার উল্লেখিত স্পেসিকিকেশন অনুযায়ী নিজের একটি পাসপোর্ট সাইজের (৩৫০*৩৫০) ছবি আপলোড করতে হবে। আপনার ছবিটি সফলভাবে আপলোড হলে আপনাকে ১৩৫ টি দেশের যেকোন একটি মুদ্রা ব্যবহার করে প্রক্রিয়াকরণ ফি প্রদান করতে হবে। এরপর ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটি Print Form ক্লিক করে ফর্মটি ডাউনলোড করে নিন।

অনলাইনে ভিসা ফি প্রদান করার সঠিক নিয়ম  

ভিসা ফি যেহেতু অনলানে প্রদান করতে হয় সেই জন্য এখানেও ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ফি প্রদান করতে হবে। ফি প্রদান করার ওয়েবসাইট হলো: https://payment.ivacbd.com । এই লিংকে প্রবেশের পর আপনার আবেদনের জন্য নির্বাচিত হাইকমিশন নির্বাচন করুন। এরপর ওয়েব ফাইল ২ বার প্রদান করুন। পরবর্তীতে IVAC CENTER নির্বাচন করুন অর্থাৎ আপনি যে সেন্টারে ফাইল জমা দিবেন ও ভিসা রিসিভ করবেন। 

এরপর আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে। আপনার নাম, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল আইডি এসকল তথ্য প্রদান করার পর অনলাইনে পেমেন্ট করতে হবে। আপনি পেমেন্ট করার জন্য ডেবিট কার্ড, ভিসা কার্ড,  মাস্টার্স কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেসম ডিবিএল নেক্সাস. কিউ ক্যাশ, ফাস্ট ক্যাশ, সিটি টাচ, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সাথে রয়েছে বিকাশ, নগদ, রকেট, মাইক্যাশ, এমক্যাশ, ও এবি ক্যাশ থেকে টাকা প্রদান করতে পারবেন। 

ভিসা ফি এর পরিমাণ

বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভারতীয় ভিসার জন্য কোন প্রকার ফি প্রদান করে লাগে না। কিন্তু ভিসা প্রসেসিং ফি ( ভিপিএফ) হিসেবে ৮০০ টাকা প্রদান করতে হয়। 

ঘরে বসে মাত্র ২০ মিনিটে ইন্ডিয়ান ভিসা অবেদনের নিয়মাবলী

আবেদনের পরে যেসব ডকুমেন্টস লাগবে

আপনি যখন আপনার পাসপোর্ট আইভ্যাকে অর্থাৎ আপনার নিকটস্থ ইন্ডিয়ান ভিসা অফিসে জমা দিবেন তখন আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রদান করা লাগবে। যেই নথিগুলো আপনার ভিসা পেতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে। গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো নিম্নরূপঃ 

১। আপনার মূল পাসপোর্ট , ভিসা আবেদন করার দিন বা তার আগ থেকে সর্বনিম্ন ছয় মাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকতে হবে। পাসপোর্টে অন্তত দুইটি সাদা পাতা থাকতে হবে। পাসপোর্ট অনুলিপি (দ্বিতীয় ও তৃতীয় পৃষ্ঠা এবং বৈধতার মেয়াদ বাড়ানোর এসডোর্সমেন্ট যতি থাকে) সংযুক্ত করতে হবে।

২। আপনার যদি পাসপোর্ট শেষ হয়ে যায় তাহলে নতুন পাসপোর্ট এর সাথে পুরাতন পাসপোর্ট অবশ্যই যুক্ত করে দিবে।

৩। আপনার সদ্যতোলা ছবি তবে ৩ মাসে পুরোনো হওয়া যাবে না। এই ছবির সাইজ ৩৫০*৩৫০ হতে হবে। ছবি অবশ্যই রঙিন হতে হবে, মুখমন্ডল পুরোপুরি স্পষ্ট থাকতে হবে। সেই সাথে ছবির পিছনের ব্যাকগ‌্রাউন্ড সাদা থাকতে হবে।

৪। আবাস্থলের প্রমাণপত্র: আপনার নিজের পরিচয়পত্রের প্রমাণ, বাড়ির ইউটিলিটি শেষ মাসের বিলের কাগজ, টেলিফোনের বিলের কাগজ( যদি থাকে), গ্যাসের বিলের কাগজ, পানির বিলের কাগজ।

৫। পেশার প্রমাণপত্র: আপনি যদি চাকরিজীবি হয়ে থাকেন তাহলে তার সনদ। অর্থাৎ আপনার অফিসের ছুটির ক্লিয়ারেন্স, আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডিকার্ড অনুলিপি, সাথে একটি প্রত্যয়ণ পত্র হলে ভালো হয়, আপনি যদি অবসরপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন সেই ক্ষেত্রে আপনার রিটায়ার্ডমেন্টের প্রমাণপত্র, যারা বিজনেস পারপাসে যাবে তাদের বিজনেস সনদ লাগবে। তবে আপনি যদি মেডিকেল ভিসার জন্য যেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার দেশে যত ডক্টরের কাগজ আছে সব কাগজ একত্র করে জমা দিতে হবে।

৬। আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণপত্র: আবেদনকারীদের প্রতিজনের জন্য ১৫০ মার্কিন ডলার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রার এনডোর্সমেন্ট বা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড, অথবা সর্বশেষ ৩ মাসের আপনার ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট অনুলিপন জমা দিতে হবে।

৭। আবেদনকারীকে অনলাইন অ্যাপ্লিকরশন ফরম এ দেওয়া নির্ধারিত স্থানর ছবি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। 

৮। সাক্ষাতের দিন আবেদনপত্রের সাথে অবশ্যই সব পুরোনো পাসপোর্ট জমা দিতে হবে; পুরোনো পাসপোর্ট জমা না দিলে আবেদনপত্র অসম্পূর্ণ বলে গন্য হবে। কিন্তু আপনি যদি প্রথমবার আবেদন করে থাকেন তাহলে আপনার নতুন পাসপোর্টই আবেদনপত্র সহ উপরে উল্লেখিত কাগজগুলোর সাথে জমা দিতে হয়ে।

৯। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে সব ধরণের ভারতীয় ভিসার সাক্ষাৎ ওয়াক-ইন পদ্ধতিতে গ্রহন করা হয়। 

অনলাইন নিবন্ধনের পর আপনি যা করবেন

অনলাইন আবেদনের পর আপনাকে সাক্ষাতে ভিসার আবেদন ও উপরোক্ত ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। রাজশাহী,খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর. বরিশাল, ময়মনসিংহ বিভাগ ব্যাতীত অন্য জেলার আবেদনকারীরা আইভ্যাক ঢাকা (যমুনা ফিউচার পার্ক) এ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। অন্যরা রাজশাহী আইভ্যাক, খুলনা আইভ্যাক, চট্টগ্রাম আইভ্যাক, সিলেট আইভ্যাক, যশোর আইভ্যাক  বরিশাল আইভ্যাক , ময়মনসিংহ আইভ্যাকে জমা দিবেন।

যেসব পাসপোর্টধারী চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা অর্থাৎ কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী তারা চট্টগ্রাম আইভ্যাকে আবেদন জমা দিবেন। যারা রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা তারা রাজশাহী আইভ্যাকে, রংপুর বিভাগের বাসিন্দারা রংপুর আইভ্যাকে জমা দিবেন।

ভিসা অফিসে ফর্ম জমা দেওয়ার নিয়ম

আপনার যে ফর্ম রয়েছে তা আপনাকে আপনার নিকটস্থ আইভ্যাকে জমা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রতি সাধারণ কর্মদিবসে সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টার মধ্যে জমা দিতে হবে। তবে রবিবার আইভ্যাক বন্ধ থাকে কারণ তাদের সেদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সে ফর্মে কোন প্রকার তথ্য ভুল না থাকলে সেইদিনই আপনার পাসপোর্ট  ও সকল ডকুমেন্টস জমা নিয়ে নেওয়া হবে। সপ্তাখানেকের মধ্যে আপনার দেওয়া ফোন নম্বরে আইভ্যাক থেকে ম্যাসেজ প্জরদান করা হবে। বা আপনার ইমেল আইডিতে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ঘরে বসে মাত্র ২০ মিনিটে ইন্ডিয়ান ভিসা অবেদনের নিয়মাবলী

তারা ম্যাসেজে আপনাকে একটা নির্ধারিত দিনে আসতে বলবে। আপনি সেই নির্ধারিত দিনে যেয়ে আপনার পাসপোর্টটি সংগ্রহ করে নিবেন। আপনার পাসপোর্ট জমা দেওয়ার ১ সপ্তাহের মধ্যে আপনার পাসপোর্ট আনপাকে ভিসাসহ প্রদান করা হবে।

আমাদের শেষকথা

আপনারা অনেকেই এই ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের জন্য অনলাইন দোকানগুলোতে লাইন দিয়ে টাকা খরচ করে আবেদন করে থাকেন। আজ থেকে আপনি নিজেই আপনার ভারত ভ্রমণের জন্য ভিসা অ্যাপ্লিকেশন নিজেই করুন। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার নিজের ভিসা নিজে করুন কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়। তাই উপরে উল্লিখিত নিয়ম মেনে কোন প্রকার অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা ছাড়ায় আপনিও আপনার ভিসা নিশ্চিত করুন।

এইরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কারণ আমরা আমদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরণের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আবির ইনফো টেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url