মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় - মানসিক চাপ কমানোর ৬টি ঘরোয়া সমাধান

মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় বর্তমানে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমারা অনেকেই এই রোগর প্রতি সেইরকম কোন গুরুত্ব দেই না। যারা মানসিক চাপে আক্রান্ত তাদের অবস্থা এতোটাই ভয়াবহ হতে পারে যে তারা যে কোন সময় জীবননাশের চিন্তাভাবনাও করে থাকে। যা অনেকটাই ভয়াবহ।

মানসিক-চাপ-থেকে-মুক্তির-উপায়-1

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো মানসিক চাপ কি, মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায়, মানসিক চাপের কী কী লক্ষণ, কীভাবে এই মানসিক চাপ কমানো যায়, মানসিক চাপের পেছনে কী কী বিষয় জড়িয়ে আছে সকল কিছু বিস্তারিত আলোচনা করব। 

সূচীপত্রঃ মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় - মানসিক চাপ কমানোর ৬টি ঘরোয়া সমাধান

মানসিক চাপ কি?

মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় জনার পূর্বে মানসিক চাপ কি এটা আপনাকে আগে বিস্তারিত জানতে হবে। আসলে মানসিক চাপ বিষয়টি হলো একধরণের মানসিক পরিস্থিতি যেই পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তির চাহিদা ও ক্ষমতার মধ্যে একপ্রকার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়া। সাধারণভাবে যদি বলা যায় তাহলে আপনি যখন কোন কাজ করবেন তখন যেই পরিবেশ বা পরিস্থিতি থাকবে সেই সেই পরিবেশ বা পরিস্থিতির কারণে যখন কাজটি করতের পারবেন না তখন যেই মানসিক চাপটা অনুভব করবেন সেটাই মূলত মানসিক চাপ। এই মানসিক চাপ অনেক মারাত্মক ক্ষতিকর একটি বিষয়।

মানসিক চাপের কারণে একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক দুইটি স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পরে। এতে সে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই মানসিক চাপ একেকজনের ওপর একেক প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, একজন ব্যক্তি তার চাকরি হারানোর কারণে মানসিক চাপেরে শিকার হতে পারে। এক্ষেত্রে তিনি অনিদ্রা, হতাশা, উদ্বেগের অনুভূতির ছাপ লক্ষণীয় হবে। অপরদিকে একজন মা যিনি তার সন্তান অসুস্থার কারণে একপ্রকার মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে। এরফলে তার ভয়-ভিতী, নিরাশ, হতাশ বোধ করবেন।

এক্ষেত্রে দেখা যায় দুজনের পরিস্থিতি দুইরকম। পরিস্থিতি অনুযায়ী দুইজনের মানসিক চাপের লক্ষণগুলোতে ভিন্নতা দেখা যায়। আপনাকে প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে কারণ সমস্যাটা ঠিক কোন কারণে হচ্ছে তাহলে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় গুলো খুব সহজেই জানতে পারবেন।

মানসিক চাপের কারণসমূহ  

মানসিক চাপের কারণসমূহ বেশ কয়েকধরণের রয়েছে। মানসিক চাপ কেন হচ্ছে সেই সম্পর্কে আপনাকে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। আপনি কি কি কারণে মানসিক চাপে ভুগতে পারেন তা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। মানসিক চাপ প্রধাণত ২ টি কারণে হতে পারে। একটি অভ্যন্তরীন অপরটি বাহ্যিক। চলুন এই দুটির বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক- 

অভ্যন্তরীন কারণ:

  • দুশ্চিন্তা থেকে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
  • নিজেকে ছোট করে দেখা বা হীনমান্যতার কারণে অনেকসময় হতাশার সৃষ্টি হয় যা মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাড়ায়।
  • বিষন্নতা মনকে খারাপ করে ফেলে যা মানসিক চাপ বাড়ায়।
  • এছাড়া অন্যান্য শারীরিক কারণ যেমন: মাথাব্যাথা, গুমের সমস্যা, ক্ষুধা মন্দা বা হ্রাস, ওজন বেড়ে যাওয়া।
ব্যাহ্যিক কারণ:

  • বেকারত্বের কারণে দুশ্চিন্তা হওয়া
  • কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ
  • পরিবারিক সম্পর্কের মন্দা অবস্থা ও কলহ
  • অর্থনৈতিক অস্বচ্ছ্যলতা
  • সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার চাপ

যেভাবে মানসিক চাপের লক্ষণ বুঝবেন

যেভাবে মানসিক চাপের লক্ষণ বুঝবেন এই বিষয়ে আপনাকে স্বচ্ছ একটি ধারণা রাখতে হবে। মানসিক চাপের লক্ষণ বুঝার জন্য প্রধাণত ৩টি মাধ্যম লক্ষ্য করা যায়। ১. শারীরিক ২. মানসিক ৩. আচারণগত লক্ষণ। তাহলে চলুন এই তিনটি লক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত ভাবে জানা যাক-

শারীরিক লক্ষণ: মানুষ যখন মানসিক ভাবে কোন প্রকার চাপ অনুভব করবে তখন নিচের লক্ষণগুলো শারীরিকভাবে পরিলক্ষিত বা সম্মুখীন হবে।

  • যখন মানসিকব চাপ অনুভব হবে তখন মাথাব্যাথা করবে।
  • অনেকসময় মাথা ঘুরবে।
  • মানসিক চাপ অনুভবের ফলে ঘুমের বিঘ্ন ঘটবে। 
  • মানসিক চাপ অনুভবের কারণে বমি বমি ভাব আসবে।
  • অনেকসময় আপনার বদহজম হবে।
  • আপনার ওজন বেড়ে যাবে কখনো কখনো এর বিপরীত অর্থাৎ ওজন কমে যেতে পারে।
  • আপনার নিজের ভিতরে ভিতরে অস্বস্তিবোধ হবে।
  • বিভিন্ন সময় অসুস্থতায় ভুগবেন।
মানসিক লক্ষণ: আপনি যখন মানসিক চাপ অনুভব করবেন তখন নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য করবেন।
  • আপনি যখন মানসিক চাপ বা অবসাধে ভুগবেন তখন আপনার ভিতরে একপ্রকার উদ্বেগ কাজ করবে।
  • আপনি সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকবেন।
  • আপনার ভিতের ভিতরে বিরক্তভাব আসবে।
  • আপনি অল্প সময়ে ও ছোট কোন বিষয়েই রেগে যাবেন।
  • আপনি অনেক হাতাশার মধ্যে থাকবেন।
  • নিজেকে একা একা মনে হবে। বেশিরভাগ সময় নিঃসঙ্গতা অনুভব হবে।
  • নিজেকে অনেক অসহায় মনে করবেন।
  • আপনার জীবনকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগবেন।
  • নিজে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধায় পড়বেন।
আচরণগত লক্ষণ: মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আচারণগত কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।  
  • আপনি যদি ধূমপান না করেন তাহলে ধূমপান করা শুরু করবেন।
  • অ্যালকোহল বা বিভিন্ন ড্রাগ ব্যবহার করতে শুরু করবেন।
  • আপনি খাওয়ার পরিমান কমিয়ে দিবেন বা বাড়িয়েও দিতে পারেন।
  • রাতে ঘুম পরিমাণ চাহিদা অনুযায়ী হবে না। 
  • আপনি নিজেকে সমাজ থেকে আড়াল করে নিবেন। 
সামাজিক পরিবর্তন: সামাজিক অনেক কিছু পরিবর্তনের ফলেও মানুষ মানসিক চাপ অনুভব করে।
  • কোন আপন জন বা প্রিয় মানিষের মৃত্যু
  • আর্থ-সামাজিক অবস্থার অবনতি হওয়া
  • নতুন কোন পরিবেশ যেখানে প্রায় সবাই অজানা অচেনা।
  • অপরিষ্কার ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ।

মানসিক চাপের প্রকারভেদ সমূহ

আমাদের জীবনে মানসিক চাপের প্রভাব, লক্ষণ, বৈশিষ্ট্য, স্থায়িত্ব ও চিকিৎসা উপর ভিত্তি করে মানসিক চাপের প্রকারভেদ রয়েছে। এই প্রকারভেদ মূলত ৩ প্রকার-
১.একিউট স্ট্রেস বা সূক্ষ্ণ মানসিক চাপ
২.ইপিসোডিক একিউট স্ট্রেস বা ধারাবাহিক মানসিক চাপ
৩. ক্রনিক ‌স্ট্রেস বা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
চলুন এই তিন প্রকার মানসিক চাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-

একিউট স্ট্রেস বা সূক্ষ্ণ মানসিক চাপ:     

সহজ ভাষায় বলতে গেলে একিউট স্ট্রেস বা সূক্ষ্ণ মানসিক চাপ হলো এক ধরণের মানসিক চাপ যা কোন একটি নির্দিষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনুভূত হয়। যদি এই ঘটনা বা সমস্যা স্থায়ী না হয়ে সমাধান হয়ে যায় তাহলে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বেশিদিন থাকে না। তবে এর পরিসীমা অনেক বেশি। সদ্য কোন ঘটনা ঘটে যাওয়া যা ঘটবে , হঠাৎ কোন কিছুর চাহিদা সৃষ্টি হওয়া এ ধরণের মানসিক ভাপ অনুভূত হতে পারে। এতে আপনার নেতিবাচক কিছু প্রভাব সৃষ্টি হবে যা আপনাকে মানসিক ভাবে চাপ সৃষ্টি করবে এবং আপনার জীবনে অনেকটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আরো পড়ুনঃ পেঁয়াজের তেল বানানোর নিয়ম-২ দিনে চুল পড়া বন্ধ করুন

উদাহৃণস্বরুপ বলা যায়, ধরুন আপনি কোন কারণে কারো সাথে তর্কা তর্কিতে জড়িয়ে পড়লেন এতে এতে আপনার মধ্যে একধরণের নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে। তা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই সমস্যাটি সমাধান হচ্ছে। এছাড়াও আরেকটি উদাহরণ বলা যায়, ধরুন আপনি চাকরি করেন সেই কর্ম ক্ষেত্রে আপনার ওপর কোন নতুন ডিউটি আরোপ করা হয়েছে বা আপনার ওপর কোন রোপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে আপনি যে স্ট্রেস টা অনুভব করবেন তা একিউট স্ট্রেস বা সূক্ষ্ণ মানসিক চাপ। এটা সমসাময়িক সমস্যা যা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

ইপিসোডিক একিউট স্ট্রেস বা ধারাবাহিক মানসিক চাপ:
ইপিসোডিক একিউট স্ট্রেস বা ধারাবাহিক মানসিক চাপ মূলত ঘন ঘন একিউট স্ট্রেস যা আপনাকে প্রায় সময় সময় পীড়া দিবে। যারা প্রায় সময় মানসিক চাপ অনুভব করে তারাই মূলত ইপিসোডিক একিউট স্ট্রেস এ ভোগে।  

আবেগ নিয়ন্ত্রণের ৪টি সহজ কৌশল

আমরা অনেক সময় দেখি আমাদের আবেগ অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হয় না বরং আমরাই আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অতিরিক্ত আবেগ বা অনিয়ন্ত্রিত আবেগ আমাদের শারীরিক ও মানসিক দুই ক্ষেত্রেই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে উত্তেজনা ও অতিরিক্ত আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সবথেকে বেশি প্রয়োজন। মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় এর জন্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই জরুরী। তাহলে চলুন নেয়া যাক আবেগ নিয়ন্ত্রণের ৪টি সহজ কৌশল।

প্রতিদিন কাজের সমন্বয় সাধন: আপনি প্রতিদিনের যে কাজগুলো করেন তা নির্ধারিত নিয়ম ও রুটিন অনুযায়ী করা যায় তাহলে আপনার কাজের যে অতিরিক্ত চাপ তা কখনোই আপনাকে মানসিক চাপে রূপান্তর করতে পারবে না। এতে একদিকে আপনার কাজের চাপ কমবে অন্যদিকে আপনি মানসিক চাপ থেকেও মুক্তি পাবেন। এতে আপনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সৃষ্টি হওয়া মানসিক উত্তেজনাও প্রশমিত হবে।

উল্টো গননা: মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, এটি মানসিক উত্তেজনা প্রশমনের একটি খুব জনপ্রিয় একটি কৌশল। এই উল্টো গণনা করার জন্য আপনাকে বিশেষ কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না। আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হলো যখন দেখবেন আপনি কোন বিষয়ে মানসিক স্থিরতা হারাচ্ছেন অথবা আবেগ বা উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তখন সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিন এরপর ১০ কিংবা ১৫ থেকে যে কোন সংখ্যা থেকে উল্টো গুনতে শুরু করুন। এতে আপনার মানসিক উত্তেজনা প্রশমিত হবে এবং মানসিক যে স্থিতিশীলতা তা ফিরে আসবে। সেই সাথে আপনার অনিয়ন্ত্রিত চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণর আসতে সাহায়তা করবে।

মানসিক-চাপ-থেকে-মুক্তির-উপায়-2

কিছু অপ্রত্যাশিত বিষয় মেনে নিন: আপনাকে এমন কিছু বিষয় মেনে নিতে হবে যা আপনি করতে নাও পারেন। বিষয়টি হলো আপনি সবসময় সবকিছু পারবেন এমন ধারণা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে হবে। আপনাকে সহজভাবে নিজের অপারগতা স্বীকার করতে হবে। আপনার অওয়াত বাইরে থাকা বিষয়গুলোকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে আপনি কি কি পারেন তার ওপর বেশি ফোকাস করতে হবে। এতে অনিশ্চিতা আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না।

মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এমন পারিপার্শ্বিক অবস্থা এড়িয়ে চলুন: উত্তেজিত হওয়ার মত পারিপার্শ্বিক অবস্থা এড়িয়ে চলার মানে কোনো বাস্তব পরিস্থিতি বা দৈনন্দিন জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নয় বরং উত্তেজিত না হয়ে সেই পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করা। আপনার মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে এমন পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।

মানসিক চাপে শরীরে কী কী ক্ষতি হয়

মানসিক চাপে শরীরে কী কী ক্ষতি হয় তা অনেকেই জানেন না। মানসিক চাপ শুধু মনের ওপরেই পড়ে বিষয়টি এমন নয়। এই চাপ আমাদের শরীরের ওপরেও পড়ে। শরীরের বিভিন্ন অংশ প্রভাবিত হয়। তাহলে চলুন নেয়া যাক মানসিক চাপে শরীরে কী কী ক্ষতি সাধন হয়।

পাকস্থলি ও অন্ত্র: মানসিক চাপের ফলে মানুষের ক্ষুধা মন্দাভাব দেখা যায়। মানসিক চাপের ফলে হজমে সমস্যা তৈরি হয় ফলে ডায়রিয়া, পেট খারাপের মতো সমস্যা শুরু হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের ফলে ইরিটেবল বাওয়াল সিনড্রম, একজিমা, হাঁপানি এবং সোরিয়াসিস রোগগুলো বাড়তে পারে। 

প্রদাহজনক: মানসিক চাপের ফলে আমাদের শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ তৈরি হয়। এতে পেশি ও হাঁড়ে একপ্রকার প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও মানসিক চাপের ফলে দ্রুত বার্ধক্য আসে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় সেই সাথে কোষ , পেশি ও হাড়ের ক্ষতি সাধন হয়। ‌

পেশি: আমরা অনেকেইজানি মানসিক চাপের ফলে আপনার মাথা ব্যাথা শুরু হয়। কিন্তু এই মাথা ব্যাথাকে আমরা অনেকেই পেশির রোগ হিসেবে মনে করিনা। অথচ মাথার ত্বকের উপর দিয়ে যাওয়া পেশির টান অনুভব করলে এই টানকেই মাথাব্যাথা বলে। 

দাঁত ও মুখ: মানসিক চাপে কারণে আপনার দাঁত ও মুখের ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে অনেকেই ঘুমের মধ্যে দাঁতের পাটি ঘষার প্রবণতা দেখা যায়। এই রোগটিকে ব্রুকিজম বলে। যেহেতু এই সমস্যাটা ঘুমের মধ্যে ঘটে তাই অনেকে হয়তো জানেই না তাদের এই রোগ রয়েছে। এই ব্রুকিজমের ফলে মাথাব্যাথা, চোয়াল শক্ত, কানে ব্যাথা, মুখে ব্যাধা কিংবা মুখ ফুলে যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা

মানসিক চাপের প্রভাবে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যেভাবে কাজ করে 

মানসিক চাপের প্রভাবে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যেভাবে কাজ করে তা আমাদের অনেকের জানা নেই। আমাদের শরীরের দুটি বড় অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে একটি অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম অপরটি হলো এন্ডোক্রাইন সিস্টেম। এ দুটি যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের মানসিক চাপের সময় শরীরে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে মানসিক চাপের প্রভাব আমাদের শরীরে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে।

শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের কাজ

আমাদের শরীরের হাইপোথ্যালামাস অংশ এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের পিটুইটারি গ্ল্যান্ড কে সক্রিয় করে। এই পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে এক প্রকার হরমোন নিঃসৃত হয় যার নাম ACTH। একইসাথে আমাদের অ্যাডরেনাল গ্ল্যান্ডকে সক্রিয় করে তুলে। এই অ্যাডরেনাল গ্রন্থি তখন কর্টিসোল নামক এক ধরণের হরমোন উৎপাদন করে। এই কর্টিসোল হরমোন নার্ভাস সিস্টেমের ইমার্জেন্সি ব্রাঞ্চকে সচল করে দেয়। এভাবেই মানসিক চাপের যে প্রতিক্রিয়া ভূমিকা রাখে।

আরো পড়ুনঃ ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা পাউডারের উপকারিতা - খেলে কী হয় ও খাওয়ার নিয়ম

শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমের কাজ

শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমের কাজ হয় মূলত আমাদের মাথার হাইপোথ্যালামাস অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমে কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি যখন স্ট্রেস অনুভব করবেন তখন এই হাইপোথেলামাস অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে দেয়। এরফলে অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম আমাদের দেহের যে অংশগুলো মানসিক চাপের সমব কাজ করে তাদের উদ্দীপিত করে তোলে। শরীরের যর কোল অংশগুলোর ওপর কাজ করে সেই সকল অংশগুলোর কার্যক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়।

ওষুধ ছাড়া মানসিক চাপ দূর করার ঘরোয়া সমাধান

ওষুধ ছাড়া মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় এর কিছু ঘরোয়া সমাধান র‍য়েছে। আমরা অনেকেই আছি যারা একটু কিছু হলেই ওষুধে ছুটে যায়। কিন্তু সকল কিছুর সমাধান ওষুধে নেই। কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো করলে আপনি মানসিক সমস্যা থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ওষুধ ছাড়া মানসিক চাপ দূর করার ঘরোয়া সমাধান।

পছন্দের কাজগুলো করুন: আপনি যে কাজগুলো করতে ভালোবাসেন অর্থাৎ আপনি যে কাজগুলো বার বার করতে চান সেই কাজটি বেছে নিন। সেটা হতে পারে আপনার ছোটবেলার কোন প্রিয় শখ যেগুলো আপনি বাংবার করতেন। যেহেতু সময়ের সাথে সাথে সেই প্রিয় কাজগুলো আমাদের মাঝে থেকে হারিয়ে যায়। যখন আপনার প্রিয় কাজগুলো করতে থাকবেন তখন আপনার মাথা থেকে চিন্তা দূর হয় এবং আপনার মনও ভালো থাকে।

ভ্রমণ করতে হবে: আপনাকে ভ্রমণ পিপাসু হতে হবে। আমরা আমাদের কাজের চাপে কোথাও ভ্রমণে যেতে পারি না। এতে আমাদের মানসিক একটি চাপ তৈরি হয়। স্ট্রেস আরো বেড়ে যায়। আপনি যখন সাগর পাড়ে হিমেল হাওয়া, চিকচিকে বালি, সবুজ কোন জায়গা এইসব আপনার মনকে প্রশান্ত করে। 

মেডিটেশন বা ঘরোয়া ব্যায়াম করতে হবে: মেডিটেশন বা ঘরোয়া ব্যায়াম আমাদের অপ্রয়োজনীয় চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে। আপনি যখন ঘুম থেকে উঠবেন তখন আশেপাশে খোলা মাঠে গিয়ে প্রাণ খুলে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। অবশ্যই আপনাকে ভোরে উঠতে হবে। এছাড়া আপনাকে প্রতিদিন সকালে উঠে হাঁটতে হবে এতে আপনার স্ট্রেস অনেকটাই কমে যাবে। যদি সম্ভব হয় দৌঁড়ানো তাহলে অবশ্যই দৌঁড়াবেন এতে আপনার ভিতরে থাকা চাপ অনেকটাই কমে যাবে। 

বই পড়াঃ আমরা কাজের চাপে ও বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে নিজেকে থেকে অনেক কিছু থেকে প্রায় বিরত রাখতে হয়। বই পড়লে আমাদের চিন্তার জগৎ প্রসারিত হয়। এই মাধ্যমে আমাদের মনের সৃশনশীল চিন্তাধারার বিকাশ ঘটে এতে আপনার ভাবনার পথ অনেকটা উন্মোচিত হয়। আপনার ভিতরে থাকা খারাপ চিন্তাধারা গুলো ঘুরপাক খায় তা অনেকাংশেই কমে যাবে।

বাগান চর্চার মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেনঃ বাগান চর্চা আমাদের অনেকেরই শখের একটা জায়গা। এটিকে অনেকে শখের বসে করে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বাগান করার কাজে আপনার ভিতরে থাকা স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, মানসিক সকল কিছুর মাত্রা কমে যায়। বাগান করার কজ আমাদের শারীরিক ও মনসিক দুটি স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী। আশেপাশের সবুজ পরিবেশ আমাদের মনকে প্রফুল্ল করে তোলে।

ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করুনঃ আমরা যে ধর্মেরি হয় না কেন সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রার্থনা আমাদের মনকে অন্যরকম শান্তি এনে দেয়। আমারা নির্ভয়ে আমাদের মনের কথা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার কাছেই খুলে বলতে পারি। তাই আপনি যে ধর্মের মানুষ সেই ধর্মের সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রার্থনা করে আপনি যে সমস্যায় আছেন তা থেকে পরিত্রান পেতে তার প্রতি প্রার্থনা ও ধৈর্যশীল হন। 

মানসিক-চাপ-থেকে-মুক্তির-উপায়-3

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তা আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। আপনার সুন্দর জীবনকে পুনরায় সুন্দর করতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেননা আমাদের কর্মক্ষেত্রের জীবনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই অপ্রতীকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে আমাদের মানসিক ভাপ। তাহলে চলুন নেয়া যাক এই মানসিক চাপকে কীভাবে নিয়ন্ত্রন করবেন।

  • প্রথমত আপনাকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজার পূর্বে আপনার মানসিক চাপের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। সেই কারণ গুলোকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে হবে।
  • এইসকল কিছুর কারণ থেকে বের হয়ে আসতে আপনাকে উপায় নির্ধারণ করতে হবে। যদি আপনার প্রিয়জন বা অনেক কাছের যারা আছে তাদের সাথে শেয়ার করে কারণগুলো সমাধান করার চেষ্টা করুন।
  • আপনি যে সকল কারণে মানসিক চাপ অনুভব করছেন সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ যে কারণে মানসিক চাপ অনুভব করছেন সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
  • কর্মক্ষেত্রে যদি মানসিক চাপ অনুভব করেন তাহলে কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারেন।
  • মানসিক চাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সবথেকে কার্যকরী উপায় হ্চ্ছে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলা বা সিচুয়েশনকে মানিয়ে নেওয়া। পরিস্থিতি বদলানো সহজ ণয় কিন্তু আপনি চাইলে নিজেকে বদলাতে বা পরিবর্তন করতে পারেন।
  • কিছু কিছু পরিস্থিতি এমন হয় যেগুলোর প্রতিকূলতাকে স্বীকার করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। যেমনঃ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিভিন্ন দুর্ঘটনা, আকস্মিক মৃত্যু। 
  • আপনার প্রতিদিনের যে কাজগুলো রয়েছে সেগুলো নিয়ম-মাফিক করা। অর্থাৎ টাইম টু টাইম করতে হবে। প্রয়োজন হলে কাজের চাপ কমিয়ে দিন।
  • নিজের খারাপ অভ্যাসগুলোকে ত্যাগ করা।
  • নিজেকে সময় দিতে হবে, নিজের পরিবারকে সময় দিতে হবে। কারন আপনি পরিবারের সাথে থাকলে নিজের মধ্যে অনেকটা প্রশান্তি ফিরে পাবেন। সপ্তাহে অন্তত একলটি দিন পরিবারকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হবেন।
  • পরিমিত পরিমাণে ঘুমাবেন।
  • সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অঙশগ্রহন করবেন। এতে একাত্ততা বোধ তৈরি হয়।
  • নিজের রাগ-ক্ষোভ কে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। আর কুটিল মানুষের সংস্পর্শ থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন।
  • সর্বশেষ প্রয়োজন হলে মানসিক ডাক্তার দেখিয়ে নিতে পারেন এবং তার পরামর্শ গ্রহণ করে জীবনযাপন করতে পারেন।

আমাদের শেষকথা

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে আমরা মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায়, মানসিক চাপ কমানোর ৬টি ঘরোয়া সমাধান. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপসমূহ। আমরা অনেকেই আমাদের প্রতিনিয়ত জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানসিক চাপের স্বীকার হয় এতে আমাদের জীবনের অনেক খারাপ একটা সময় নেমে আসে। তাই নিজেকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত করতে উপরের পদক্ষেপগুলো অবশ্যই মেনে চলবেন এরফলে মানসিক চাপ নামক সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন। 

এইরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কারণ আমরা আমদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরণের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আবির ইনফো টেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url