দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয় - পোকা দাঁতের ব্যাথা কমানোর উপায়
দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয় আমরা অনেকেই জানি না। দাঁত আমাদের দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষেরাই এই দাঁতের ব্যাথায় ভুগে থেকে। কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে ব্যাথা দূর করার উপায় অনেকেরই জানা নেই। তারই প্রেক্ষিতে আজকের এই আর্টিকেল।
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয়, কীভাবে এর ব্যাথা থেকে নিজেকে পরিত্রাণ করবেন, পোকা দাঁতের ব্যাথা কমানোর উপায়, ঘরোয়া প্রতিকার সহ আরো অবেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশাকরি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে উপকৃত হবেন।
সূচীপত্রঃ দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয় - পোকা দাঁতের ব্যাথা কমানোর উপায়
- দাঁতে পোকা বা ডেন্টাল ক্যাভিটি কী?
- কী কারণে দাঁতের পোকা বা ক্যাভিটি হয়
- দাঁতে পোকা বা ডেন্টাল ক্যাভিটি হওয়ার লক্ষণ
- দাঁতের পোকা ও ডেন্টাল ক্যাবিটির ব্যাথা দূর করার গাছ
- দাঁতের ব্যাথা কমাতে ঘরোয়া সমাধান
- দাঁত ভালো রাখতে যেকল নিয়ম মেনে চলবেন
- দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়
- মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করণীয়
- দাঁতের ব্যাথা এর মেডিকেল চিকিৎসা
- আমাদের শেষকথা
দাঁতে পোকা বা ডেন্টাল ক্যাভিটি কী?
দাঁতে পোকা বা ডেন্টাল ক্যাভিটি কী সে সম্পর্কে আমরা বেশির ভাগ মানুষই স্বচ্ছ ধারণা রাখি না। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে দাঁতে পোকা কখনোই হয় না। যারা দাতে পোকা বলে চিকিৎসা করে তাদের দাতের চিকিৎসা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। এই দাঁতের পোকা হলো মূলত দাঁতের কালো দাগ, স্পট, ক্ষয় এগুলো। দন্ত চিকিৎসায় এই প্রচলিত শব্দ দাঁতের পোকাকে মেডিক্যালের ভাষায় বলে ডেন্টাল ক্যাভিটি বা ডেন্টাল ক্যারিজ বলে।
এই ডেন্টাল ক্যারিজ এর কারণেই মূলত আমাদের দাঁতে ব্যাথা হয়। ক্যাভিটি হলে সাধারণত আমরা সেইরকম কোন লক্ষণ খুঁজে পায় না। দীর্ঘদিন অবহেলার ফলে আমরা ক্যাভিটিকে সেইরকম গুরুত্ব দেই না। ফলে এটি ধীরে ধীরে ব্যাথায় রূপ নেয় তখন আমরা টের পায় আসলে আমাদের ক্যাভিটি হয়েছে। এরজন্য অনেকাংশেই আমাদের রুট ক্যানেলসহ আরো বিভিন্ন চিকিৎসা নিতে হয়।
কী কারণে দাঁতের পোকা বা ক্যাভিটি হয়
দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয় জানার পূর্বে আপনাকে জানতে হবে কী কারণে দাঁতের পোকা বা ক্যাভিটি হয়। এতে আপনার জন্য উপায় বের করাটা অনেকাংশেই সহজ হয়ে যাবে। ডেন্টাল ক্যাভিটি হয় মূলত ব্যাকটেরিয়া থেকে। এই ক্যাভিটি হওয়ার পেছনা দায়ী ব্যাকটেরিয়া। ব্যাকটেরিয়া আমাদের প্রত্যেককের মুখেই থাকে। আমরা যখন খাবার খায় এবং সেই খাবার গুলো দাঁতের ফাঁকে জমে থেকে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়। আর এই ব্যাকটেরিয়ায় দাঁতের গোড়ায় ক্ষত সৃষ্টি করে।
আবার আমরা যখন কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন: ভাত, রুটি. আলু, ভিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার দাঁতের ফাঁকে জমে থাকে। এই জমে থাকা খাবারগুলোতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ বেশি করে। বিশেষ করে বাচ্চাদের চকলেট, চুইংগাম, ক্যান্ডি এইসব খাবারে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ বেশি হয়। যার কারণে বাচ্চাদের ক্যাভিটি বেশি হয়। যার ফলে বাচ্চারা ব্যাথায় ছটফট করে। এছাড়া দাঁতের ক্ষয়ের কারণেও ক্যাভিটি হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ পেঁয়াজের তেল বানানোর নিয়ম-২ দিনে চুল পড়া বন্ধ করুন
দাঁত ক্ষয় হতে হতে ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যাসিড আরো গভীরে চলে যায় যারফলে দাঁতের স্নায়ু ও শিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও তীক্ষ্ণ ব্যাথা হয়। আবার আমাদের অনেকেরই দাঁত অপরিষ্কার থাকে। মূলত খাবার জমে প্ল্যাক বা ময়লার আস্তরণ তৈরি হয়। এই প্ল্যাকে এক ধরণের অ্যাসিড থাকে যা দাঁতের বাইরের শক্ত এনামেলকে ক্ষয় করে দেয়। এই অ্যানামেল ক্ষয় হয়ে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয় ও ক্যাভিটি সেগুলোতে বাড়তে থাকে।
বাচ্চাদের এই সমস্যা অনেক বেশি পরিমাণে হয় কারণ তাদের ছোটবেলায় ওরাল হাইজিং না মেনে চলায় ও খাদ্যাভাসের কারণে শিশুর দাঁতে গর্ত হয়ে যায়। এই গর্ত হয় মূলত ক্যারিজের কারণে। বাচ্চারা মূলত অনেক জাঙ্ক ফুড, চিপস, চকলেট, জুস এগুলো খাবার পর শিশুদের দুধ ভাতের সাথে এক প্রকার অ্যাসিড থাকে। যার সাথে বিক্রিয়া করে দাঁতের অ্যানামেল তৈরি করে ক্যারিজ অর্থাৎ গর্ত তৈরি করে। এরপর ডেন্টিন ক্ষয় করে ও দাঁতের যে মজ্জা থাকে সেগুলোর মধ্যেও ক্যারিজ চলে যায়।
দাঁতে পোকা বা ডেন্টাল ক্যাভিটি হওয়ার লক্ষণ
দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয় ও পোকা দাঁতের ব্যাথা কমানোর উপায় জানার জন্য দাঁতে পোকা বা ডেন্টাল ক্যাভিটি হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। ক্যাভিটি হয়েছে তা প্রথমের দিকে বোঝা না গেলেও কিছু কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখলে বুঝতে হবে আপনার ক্যাভিটি হয়েছে। এবং সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। লক্ষণ গুলো হলো মূলত সারাক্ষণ দাঁতে ব্যাথা থাকবে, অকারণেই দাঁতে মাঝে মাঝেই অসহ্য ব্যাথা হবে, ঠান্ডা পানি খেলেই দাঁত শির শির করবে, আবার সেনসেটিভ জাতীয় বা টক জাতীয় খাবার খেলে দাঁত শিরশির করে উঠে।
অনেকসময় গরম ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের দাঁতে শিরশির ভাব আসেব যা ক্যাভিটি হওয়ার লক্ষণ। এছাড়া আমাদের দাঁতে বিভিন্ন আকৃতির ছোট ছোট ছিদ্র যা অনেক সময় খালি চোখে দেখা যায়। আবার আমাদের দাঁতের বাইরে বাদামি বা হলুদভাব আস্তরণ পড়ে যার ফলে সেখানে ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেইজন্য খাবারের সময় প্রতি কামড়ে ব্যাথা অনুভব হবে। উপরের লক্ষণগুলো দেখলে বা অনুভব করলে বুঝতে হবে আপনার দাঁতে ক্যারিজ জমেছে।
দাঁতের পোকা ও ডেন্টাল ক্যাবিটির ব্যাথা দূর করার গাছ
দাঁতের পোকা ও ডেন্টাল ক্যাবিটির ব্যাথা দূর করার গাছ রয়েছে যা মূলত আর্য়ুবেদিক গাছ। এই গাছটির নাম হলো আকন্দ গাছ। এই গাছকে ইংরেজিতে বলে "জায়ান্ট মিল্কোয়েড"। আপনারা এই গাছ রাস্তার ধারেই দেখতে পারবেন। এই গাছ বিনা যত্নেই বেড়ে ওঠে। এই গাছের ফুল, পাতা, ছাল সকল কিছুই ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়। এই আকন্দ গাছের রস ব্যাথা যুক্ত স্থানে অর্থাৎ আপনার দাঁতে যে স্থানে ব্যাথা সে স্থানে লাগান তাহলে ব্যাথা অনেকাংশেই কমে যাবে। এছাড়াও এই আকন্দ গাছের নানামুখী ব্যবহার রয়েছে। চলুন জেনে আসি আকন্দ গাছের নানামুখী উপকার-
- শরীরের কোন জায়গায় যদি ক্ষত সৃষ্টি হয় তাহলে তাহলে সেই স্থানে আকন্দ পাতা দিয়ে সিদ্ধ করা পানি ক্ষত স্থানে ভালোভাবে ধুয়ে দিন। এতে আপনার সেই ক্ষত স্থান দূষিত থাকলে তা ভালোভাবে সংক্রমণ মুক্ত হবে।
- আকন্দ গাছের যে মূল রয়েছে তার গুঁড়ো রয়েছে অর্থাৎ পাউডার হিসেবে বিক্রি করা হয়। এই গুঁড়ো খেলে আপনার খুদামন্দা ভাব থাকলে খুদা বৃদ্ধি পাবে।
- প্রচন্ড দাঁতের ব্যাথা হলে এই আকন্দ গাছের কষ ব্যাথার স্থানে দিন। তাহলে ব্যাথা অনেকটাই কমে যাবে। যদি সরাসরি দিতে না পারেন তাহলে তুলোয় ভিজিয়ে দাঁতের গোড়ায় লাগাতে হবে।
- আমরা অনেক সময় পায়ে চোট পেয়ে থাকি বা পা মচকে যায় সেইক্ষেত্রে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হয়। এরজন্য আপনি যদি আকন্দ পাতা দিয়ে গরম শেঁক বা ভাপ দেন তাহলে ব্যাথা অনেকটাই প্রশমিত হয়ে যায়।
- আমাদের অনেকসময় বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দেয় ফলে জ্বালা আনুভূতি হয়। এি জ্বালা কমাতে আকন্দ পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
- এই আকন্দ পাতার আঠার সাথে চারগুন সর্ষের তেল অর্থাৎ যতটুকু আঠা তার চারগুন সরিষার তেল মিশিয়ে গরম করে তার সঙ্গে কাঁচাহলুদের রস মিশিয়ে খোস-পচড়ায় লাগালে অনেক উপকার পাবেন।
দাঁতের ব্যাথা কমাতে ঘরোয়া সমাধান
দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয় ও এর মধ্যে দাঁতের ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া সমাধান জানতে হবে। কারণ যখন দাঁতের ব্যাথা উঠে তখন তাৎক্ষনাত আরাম পেতে আপনাকে ঘরোয়া সমাধান বেছে নিতে হবে। ঘরোয়া সমাধানে কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক দাঁতের ব্যাথা কমাতে ঘরোয়া সমাধান-
- আমাদের প্রায় সবার বাসাতেই সরিষার তেল থাকে। আপনার দাঁতে যদি মারাত্মক ব্যাথা উঠে তাহলে সরিষার তেলের মধ্যে কাঁচা হলুদ ও লবন মিশিয়ে নিন। এরপর সেটি ব্যাথার স্থানে লাগান। লবন কিন্তু ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে।
- পেঁয়াজ দাঁত বা মাড়ির ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। সেইজন্য আপনাদের পেঁয়াজকে টুকরো টুকরো করে ব্যাথার স্থানে চেপে ধরে রাখুন। ব্যাথা অনেকাংশেই কমে যাবে।
- আপনি যদি প্রতিনিয়ত দাঁতের সমস্যায় ভোগেন তাহলে দাঁতের নিচে সবসময় লবঙ্গ রাখার অভ্যাস করুন।
- একটি পাত্রে নিম পাতা ও লবন গুলিয়ে ভালোভাবে তা ফুটিয়ে নিন এরপর উশুম উশুম গরম হলে পানি দিয়ে কুলকিচি করুন। এতে ব্যাথা কমবে সেই সাথে ভিতেরের জীবানু ধ্বংস হয়ে যাবে।
- আমলা ও কর্পূর হতে পারে আপনার দাঁতের ব্যাথার কার্যকর দুটি উপাদান। প্রথমত আমলকির রসের সাথে একটি কর্পূর যোগ করে নিন এরপর তা ব্যাথার স্থানে লাগান। এছাড়াও আরেকটি উপায় রয়েছে সেটি হলো কর্পূরের মধ্যে তিলের তেল মিশিয়ে ভালোমতো একপ্রকার পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্ট ব্যাথার স্থানে ও আশেপাশের স্থানে ম্যাসাজ করতে হবে। এতে স্বল্পমেয়াদৌ দাঁতেঢর ব্যাথা কমতে পারে।
- শুধু লবন আর পানি মিশিয়ে উশুম উশুম গরম পানি করে তা কুলকুচি করলে ব্যাথা কমে যায়।
- রসুনের কোয়াগুলোকে ছাড়িয়ে কয়েকটা কোয়া মুখে নিয়ে যেই দাঁতে ব্যাথা অনুভব করবেন সেই দাঁতে কোয়াগুলো চেপে ধরে রাখুন।
দাঁত ভালো রাখতে যেকল নিয়ম মেনে চলবেন
দাঁত ভালো রাখতে ও দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয় এর মধ্যে বেশ কয়েকটা নিয়ম মেনে চলতে হবে তবেই আপনার দাঁত ক্যারিজ ও ক্যাভিটি মুক্ত করতে পারবেন। আমরা আগেই জেনেছি ক্যাভিটি কী ও ক্যারিজ কী। এই ক্যাভিটি শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সী মানুষের পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেহেতু আমাদের দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার জন্য এই ক্যারিজ ও ক্যাচিটি হয়ে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া দূর করতে পেরলেই আপনার দাঁতে কোন প্রকার ব্যাথা হবে না। তাহলে চলুন নেয়া যাক দাঁত ভালো রাখতে যে সকল নিয়ম মেনে চলবেন-
- ভিটামিন সি এ ভরপুর লেবু জীবানু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। ক্যাভিটির ফলে যে ব্যাথা অনুচব হয় সেই ব্যাথাও প্রশমন করে এই লেবু। মুখে একটুকরো লেবু নিয়ে চিবোতে থাকুন। এর কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করে নিন। এতে ক্যাভিটি অনেকাংশেই কমে যাবে।
- মিষ্টি জাতীয় খাবার কোনভাবেই খাওয়া যাবে না। আপনি যদি দাঁতের ব্যাথার ভুক্তোভুগী হন তাহলে আপনার জন্য মিষ্টি জাতীয় খাবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- আমরা যারা মুসলিম আছি আমাদের নামাজের পূর্বে মেসওয়াক করা সুন্নত। এই মেসওয়াক করলে আপনার দাঁত অনেক ভালো থাকবে।
- নিম কাঠি দিয়ে দাঁত ঘষলে আপনার দাঁত ক্যাভিটি থেকে সুরক্ষা পাবে। কারণ নিমে থাকা ফাইবার দাঁতে প্লাক হতে দিবে না। আবার আপনি চাইলে নিমপাতা কয়েকটি চিবিয়ে তারপর কুলকিচু ফেলুন। তেতো ভাবের জন্য অনেকেই এই নিম পাতা খেতে চান না তবে আপনার জন্য এই নিম পাতা অনেকাংশেই সাহায্য করবে।
- এরপর তিলের তেল বা নারিকেলের তেল ব্যাথার অংশে ১০ মিনিট এর মতো লাগিয়ে রাখুন। তারপর কুলকুচি করে ধুয়ে ফেলুন। আমাদের মুখে যে ব্যাকটেরিয়া, জিঞ্জিভাইটিস, প্লাক এগুলো কমাতে তিলের তেল অনেক সাহায্য করে।
- আপনার খাবার খাওয়ার পর থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সংগ্রহ ভিটামিন ডি সাহায্য করে। এই ভিটামিন ডি আপনাকে ক্যাভিটির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
- ক্যাভিটি সরাতে লবঙ্গ অনেক সাহায্য করে। তাই সবসময় দাঁতের নিচে লবঙ্গ রখতে হবে।
- কুসুম পানিতে লবন মিশিয়ে আপনি কুলকুচি করলে দঁতের ব্যাথা থেকে শুরু করে মাড়ি ফোলা, ক্যাভিটি দূর করতে অনেক সাহায্য করে।
দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়
দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানলে আপনি খুব সহজেই দাঁতের গর্ত দূর করতে পারবেন। ডেন্টাল ক্যাবিটির কারণে মূলত দাঁতের গর্ত হয়ে থাকে। গর্ত হওয়ার প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন যাতে সেটি বেশি বাড়তে না পারে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে-
ডিমের খোসা: ডিমের খোসা দিয়ে আপনি দাঁতের গর্ত রোধ করতে পারবেন। প্রথমত আপনি কয়েকটি ডিমের খোসা নিয়ে নিন এবং সেগুলোকে একটি পাত্রে নিয়ে সিদ্ধ করে নিন। এরপর তা ভালোভাবে শুকাতে দিন। এরপর খোসাগুলো দিয়ে গুঁড়া তৈরি করুন। এইবার বেকিং সোডার সাথে গুঁড়া ভালোভাবে মিক্স করুন এবং এই পাউডার দিয়ে দাঁত মালিশ করুন। আমরাজানি ডিমের খোসায় প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে যা দাঁতের এনামেল বৃদ্ধি করে। আবার দাঁতের ক্যাভিটি দূর করে দেয়। এরফলে দাঁতের গর্ত খুব সহজেই সেরে যায়।
আরো পড়ুনঃ এলার্জিতে নিমপাতার বব্যহার
নারিকেল তেল: বিশেষজ্ঞদের মতে প্রায় ২০-২৫ মিনিটের মতো এক টেবিল চামচ তিল অথবা নারকেল তেল দিয়ে কুলকুচি করে ফেলে দিন। কারণ আমাদের ক্যাভিটি হলে চরম ব্যাথা হয়। আর এই ব্যাথা প্রশমনে নারকেল বা তিলের তেল অনেক উপকারে আসে। এই নারকেলের তেল দিয়ে আপনি আপনার দাঁতের গর্তও দূর করতে পারবেন। সেইক্ষেত্রে নারিকেল তেল জাদুকরী উপাদান হিসেবে কাজ করে। দাঁত পরিষ্কার করার জন্য এই নারকেল তেল অত্যন্ত উপকারী।
হার্বাল পাউডার: আমাদের দাঁতে ক্যাভিটি হলে অনেকসময় মাড়ি থেকে রক্ত ক্ষরণ হয়। এটার জন্যও রয়েছে সহজ উপায়। আপনি বাড়িতেই ভেষজ উপাদান দিয়ে পাউডার বানিয়ে দাঁত মাজলে ক্যাভিটি অনেকাংশেই দূর হয়ে যাবে সেইসাথে ব্যাথা ও বক্তক্ষরণও বন্ধ হয়ে যাবে। দাঁতের গতর্ দূত করার জন্য এই হারবাল পাউডার আপনার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাহলে চলুন ঘরে বসে দাঁতের গর্ত বন্ধে হারবাল পাউডার বানানোর নিয়ম।
একটি বাটিতে ১ চা চামচ নিম পতার গুঁড়ো নিয়ে নিন। এরমধ্যে আধা চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া, আধা চা চামচ লবঙ্গ গুঁড়া মিশিয়ে একটি হারবাল পাউডার তৈরি করে নিন। এরপর এই হারবাল পাউডার দিয়ে প্রতিদিন দাঁত মাজুন। পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে এই হারবাল পাউডার দিয়ে প্রতিদিন দাঁত মাজুব। এতে অনেকটাই উপকার পাবেন।
মাড়িতে ইনফেকশন হলে কি করণীয়
দেহের একটি বিশেষ অংশ হলো দাঁত। দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয় কী তা জানতে হবে। এই দাঁত হজমেও অনেক ভূমিকা রাখে। যখন আমরা ভাঁত খায় তখন অনেক সময় গুঁতা লাগে আবার যখন আমরা ব্রাশ করি তখন অনেকসময় গুঁতা লেগে খাম-জখম হয়ে যায়। সেখানে ঘাঁ এর সৃষ্টি হয়। এই ঘাঁ থেকেই ইনফেকশন এর সৃষ্টি হয়। এই ইনফেকশনের থেকেই ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এই ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে এই ইনফেকশন। তাই এই ইনফেকশন হলে আমাদের কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। চলুন সেই উপায় গুলো সম্পর্কে জেনে নিই-
টি ট্রি অয়েল: টি ট্রি অয়েল আমাদের ইনফেকশন রোধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এই টি ট্রি অয়েল ইনফেকশন সরাতে অ্যান্টিসেপটিক এর মতো কাজ করে। এই টি ট্রি অয়েলের সাথে এক চা চামচ নারিকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটি ইনফেকশনের স্থানে ব্যবহার করুন। এটি কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর কুলি করতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে ইনফেকশন সেরে যায়। আপনি যদি কোন প্রকার ঔষধ ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে ডক্টরের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মধু: দাঁতের মধুর ইনফেকশন রোধে মধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেখানে আপনার ইনফেকশন হয়েছে সেখানে মধু লাগিয়ে দেখতে পারেন। ইনফেকশনের স্থানে ব্যাকটেরিয়া রোধে মধু অনেক উপকারী।
হলুদ: হলুদ সারা দেহের অনেক অসুখের অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে। হলুদে রয়েছে একটি বিশেষ উপাদান যার নাম হলো কারকিউমিন। যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে অনেক কার্যকরী। তাই দাঁতের মাড়ির ইনফেকশন সহ বিভিন্ন ইনফেকশন রুখতে হলুদ অনেক ভূমিকা রাখে।
দাঁতের ব্যাথা এর মেডিকেল চিকিৎসা
আমরা এতোক্ষণ দঁতের ব্যাথা কমানোর উপায় , ঘরোয়া উপায় সকল কিছুর সমাধান জেনেছি। এখন আমরা জানবো দাঁতের ব্যাথার মেডিকেল চিকিৎসা সম্পর্কে। সেই আপনাকে আপনার জানাশোনা একজন ডেন্টিস্ট এর কাছে যেতে হবে। এরপর ডেন্টিস্ট যে সকল পদ্ধতি অনুসরণ করবে সেই পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে জেনে নয়া যাক-
পুঁজ বের করা: যদি আপনার মুখের মধ্যে কোন প্রকার পুঁজ জমে থাকে সেইক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পুঁজ বের করতে হবে। একজন প্রফেশনাল চিকিৎসক এই অবশ্যই পঁজ থাকলে তা বের করে পরবর্তী ধাপে যাবে।
পাল্পের ক্যাপিং: এটা সাধারণত আরাম দেওয়ার জন্য একটি পদ্ধতি বলা যেতে পারে। আরাম দেওয়ার জন্য সাধারণত ক্যালসিয়মের একটি দ্রবণ লাগানি হয় যাতে দাঁতের পুনরায় পাল্পের পুনরুদ্ধার হয়। সাধারণত আয়োডোফর্ম ক্যালসিয়াম পেস্ট এই কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।
রুট ক্যানেল চিকিৎসা: এটি খুবই সাধারণ ও পরিচিতি একটি চিকিৎসা। এই চিকিৎসা আমরা প্রতিনিয়ত শুনে থাকি। এই রুট ক্যানেল পদ্ধতিতে বা আর-সি-টি পদ্ধতরিতে ক্ষতিগ্রস্থ পাল্পকে বার করে নেওয়া হয় এরপর গাট্টা-পারচার (পুটিং) পাল্পের গর্তে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে গর্তটি পূরণ হয়ে যায়। পুটিং লাগানোর পরে পাল্প পূরণ করে ক্যাপ লাগিয়ে দেওয়া হয়। এটি দাঁত বাঁচিয়ে রাখার সবথেকে ভালো একটি উপায়। বর্তমানে ডেন্টস্টরা এই পদ্ধতি সবথেকে বেশি ব্যবহার করছে।
দাঁত তুলে ফেলা: দাঁত তুলে ফেলা হলো সবথেকে কম জনপ্রিয় একটি চিকিৎসা। কারণ সবাই চাই দাঁত রক্ষা করতে। মানুষের দেহে সব অংশেরি গুরুত্ব রয়েছে তাই যেখানে অনেক অপশন রয়েছে সেখানে দাঁত তুলে ফেলা অনর্থক।
আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা দাঁতের গোড়ায় ইনফেকশন হলে করণীয় - পোকা দাঁতের ব্যাথা কমানোর উপায়, ইনফেকশন থেকে মুক্তির উপায়, ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁতের ব্যাথা কমানোর উপায়। সকল বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছি। আমরা অনেকেই দাঁতের ব্যাথা সহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকি। শুধু বড়দেরই নয় শিশুদেরও এই সমস্যা হয়ে থাকে। তাই ওপরের সকল পদ্ধতিগুলো মেনে চললে ও সঠিক চিকিৎসা নিলে আপনিও এই সমস্যা থেকে খুব সহজেই পরিত্রাণ পেয়ে যাবেন।
এইরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কারণ আমরা আমদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরণের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
আবির ইনফো টেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url