তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের - তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের জন্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাদের মা বোনেরা অনেকেই মসজিদে না গিয়ে বাসায় তারাবির নামাজ পড়েন। অনেকেরই নামাজের সঠিক নিয়ম জানা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। আশাকরি আজ থেকে তারাবির নামজ পড়া নিয়ে কোন কনফিউশন থাকবে না।
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো, তারাবির নাম পড়ার সহিহ শুদ্ধ নিয়ম, তারাবির নামজ কয় রাকাত, কীভাবে নিয়ত করবেন সকল জিছু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশাকরি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে উপকৃত হবেন এবং আপনার সকল দ্বিধা দন্ধ কেটে যাবে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের - তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
- তারাবির নামাজ কত রাকাত ৮ না ২০
- তারাবির নামাজ ফরজ সুন্নত নাকি নফল
- তারাবির নামাজের নিয়ত
- তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের
- তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
- তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ
- মহিলারা মসজিদে গিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবে কি?
- মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়ার শর্ত সমূহ
- আজকের পোস্ট বিষয়ক সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
- আমাদের শেষকথা
তারাবির নামাজ কত রাকাত ৮ না ২০
তারাবির নামাজ কয় রাকাত ৮ না ২০ সবথেকে বেশি কনট্রোভারশিয়াল একটি টপিক। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি অনেক আলোচনা সমালোচনার বিষয়। আহলে হাদিস মাজবাহের আলেমরা ৮ রাকাত পড়ে থাকে আর হানাফি মাজহাবের আলেমরা ২০ রাকাত পড়ে থাকে। মাঝখানে সাধারণ মুসল্লিরা দ্বিধা দন্ধে পড়ে আছে। আজকের এই হেডিং এ আমরা একদম সহিহভাবে কয় রাকাত সেটা জানবো।
তারাবির নামাজ কয় রাকাত এটি একটি ইখতেলাফি মাসাআলাহ্। এটার পক্ষে বিপক্ষে উভয়ই দলিল রয়েছে। ২০ রাকাত তারাবি পড়ার পক্ষে দলিল-
মুসান্নাফে(আঃ) রায্যাক হতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে- أَنَّ عُمَرَ جَمَعَ النَّاسَ فِي رَمَضَانَ عَلَى أُبَي بنِ كَعَبٍ وَعَلَى تَمِيْمِ الدَّارِيْ عَلَى إِحْدى وَعِشْرِيْنَ مِنْ رَكْعَةِ يَقْرَؤُنَ بِالْمَئِيين
অর্থঃ উমার (রাঃ) রমজানে উবাহ ইবনে কাব ও তামীম আদদারীকে ইমামতির সময় মুসল্লিদের একুশ রাকাত সালাতে জামায়াতবদ্ধ করেছিলেন। (মুসান্নাফে(আঃ) রায্যাক, হাদিস নং-৭৭৩০)
মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হয়- مَا كَانَ يَزِيْدُ فِيْ رَمَضَانَ وَلاَ غَيْرِهِ عَلَى إِحْدى عَشَرَةَ رَكْعَةً
অর্থঃ তিনি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে রাতে রমজানে বা অন্য যে কোন সময়ে ১১ রাকাতের বেশি পড়তে দেখেননি। অর্থাৎ রমজানে ৮ রাকাত তারাবি এবং ৩ রাকাত বিতর সালাত।
বিঃদ্রঃ সৌদি আরবের অনেক মসজিদে ১১ রাকাত পড়ালেও মক্কা ও মদিনায় ২০ রাকাত তারাবি ও ৩ রাকাত বিতর সালাত আদায় হয়। তবে করোনার পরে থেকে ১১ রাকাত সালাত আদায় হচ্ছে।
এখনও আপনাদের মনে দ্বিধা কাটেনি তাইতো? তারাবির নামাজ কয় রাকাত এটার সঠিক উত্তর হলো ৮ রাকাত। অর্থাৎ ৮ রাকাত তারাবি এবং ৩ রাকাত বিতর। সবমিলিয়ে তারাবির নামাজ ১১ রাকাত। এটিই সহিহ ও শুদ্ধ। সৌদি আরবের সবথেকে বড় ও প্রসিদ্ধ আলেম আস সুদাইস তিনিও ৮ রাকাত পড়ার পক্ষেই যুক্তি দিয়েছেন। তাই আমাদেরকেও সহিহ শুদ্ধভাবে ৮ রাকাত তারাবির সালাত আদায় করতে হবে।
যেহেতু মা আয়েশা (রা.) তিনি নিজে বলেছেন, তিনি রাসুল্লাহকে রাতে কখনোই রমজান এবং রমজানের বাইরে ৮ রাকাতের বেশি নামাজ পড়তে দেখেননি সেহেতু আমাদের এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। নবী ৮ রাকাত সালাত আদায় করতে করতে প্রায় ফজর হয়ে আসতো। অর্থাৎ তিনি অনেক সময় নিয়ে নামাজ পড়তেন। কিন্তু বর্তমানে এশিয়া মহাদেশের বেশ কয়েকটা দেশে কিছু বেদাতি আলেম এই ২০ রাকাত নামজ পড়াকে সহিহ বলে। এটা সম্পূর্ণ বিদাত।
তারাবির নামাজ ফরজ সুন্নত নাকি নফল
তারাবির নামাজ বা কিয়ামুল লাইল সুন্নত নাকি নফল এটা অনেকেই জানতে চান। তারাবির নামাজ হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। অর্থাৎ এটি ওয়াজিবের কাছাকাছি। আপনাকে যেমন ওয়াজিবের জন্য জবাবদিহী করতে হবে তেমন আপনাকে সুন্নাতে মুয়াকাদাহ এর জন্যও জবাবদিহী করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে সওয়াব প্রাপ্তির আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর উবাদত করেন, তাঁর জীবনের আগের সকল মাফ করা হবে। (বুখারি ও মুসলিম)
সহীহ আল বুখারির ২০১২ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল আদায় এবং বাকি সকলেই তাঁর সাথে কিয়ামুল লাইল আদায় করলেন। তার পরের দিন এবং তৃতীয় দিনেও অনেক মানুষ নামাজ আদায় করলেন। চতুর্থ দিনেও অনেক সময় আসলো কিন্তু নবী সেইদিন ইচ্ছা করে কিয়ামুল লাইল পড়তে আসলেন না। ফজরের সময় নবী আসলেন।অতপর তিনি বললেন আমি ইচ্ছা করেই আসিনি।
আরো পড়ুনঃ ১০০০+ উম্মে দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নামের তালিকা
আমি চাই না কিয়ামুল লাইল তোমাদের জন্য ফরজ হয়ে যাক। অর্থাৎ এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে তারাবির নামাজ আমাদের জন্য ফরজ নয়। তবে আমাদের যত দূর সম্ভব এটা আদায় করা উচিত। যদি কোন যৌক্তিক কারণ অর্থাৎ অসুস্থা বা অন্য কোন সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে হয়তো আপনি আদায় না করতে পারেন। তবে আমাদের সকলের চেষ্টা করা উচিত তারাবির নামাজ আদায় করা।
তারাবির নামাজের নিয়ত
তারাবির নামাজের নিয়ত নিয়ে মূলত অনেক মতভেদ রয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা নিয়তকে সম্পূর্ণ বেদাত বলছে। আরেকশ্রেণীর মানুষ আছে যারা নিয়তকে বেদাত বলা থেকে বিরত থাকছে। তবে যারা তারাবির নামজের নিয়ত সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য- نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر.
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসালিয়া লিল্লাহি তাআ'লা, রাকাআ'তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহ তাআ'লা মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল ক'বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
অর্থ: আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়ত করছি, আল্লাহু আকবার।
আসলে আমাদের সকলের একটি বিষয় জানা দরকার সেটি হলো নিয়ত অর্থ হলো মনের সংকল্প। আপনি মনে মনে যেটা সংকল্প করছেন অর্থাৎ আপনি এখন তারাবির নামাজ পড়বেন এখানে বিশেষভাবে দোবা পড়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। আপনার মন যেখানে জানে আপনি তারাবির নামাজ পড়বেন সেখানে নিয়ত পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। তাই আপনারা কখনো কোন নামাজের জন্য নিয়ত করবেন না।
তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের
তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে কোথাও বলা হয় নি। পুরুষরা যেভাবে নামাজ পড়ে মহিলারাও একই পদ্ধতিতে নামাজ পড়বে। প্রথমে এশার নামাজের পূর্বে ৪ রাকাত সুন্নত, সহিহ শুদ্ধভাবে এশার ফরজ ৪ রাকাত সালাত আদায় করবে। এরপর ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত নফল সালাত আদায় করার পর মূলত তারাবির নামাজ আসায় করতে হবে। তারাবির নামাজ মূলত ২ রাকাত করে। অর্থাৎ ৪ সালামে তারাবির নামাজ শেষ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ভালোবাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার আমল ও ৫টি কার্যকরী দোয়া
এখানে আপনি যে কোন সূরা দিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন। স্বাভাবিক ২ রাকাত নামাজ যেমন পড়তে হয় ঠিক তেমনি ভাবেই ৪ রাকাত নামাজ পড়ার পর একটু বিরত নিবেন। বিরতির মধ্যে আপনি বিভিন্ন সূরা, দোয়া দরুদ পড়তে পারেন। একটু সময় নিয়ে পড়ে আবারো ৪ রাকাত সালাত আদায় করে নিন। এভাবে এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে ৮ রাকাত সালাত আদায় করুন। তারাবির যে মূল বিষয় সেটি হলো সালাত আদায় করা। ইবনে ইয়াযিদ (রা.) বলেন, أَمَرَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أُبَيْ بْنِ كَعَبٍ وَتَمِيْمَا الدَّارِيِّ أَن يَّقُوْمَ لِلنَّاسِ بِإحْدى عَشَرَةَ رَكْعَةٍ
অর্থঃ উমার ইবনে (রা.) তার সঙ্গী সাহাবী উবাই ইবনে কাব তামীম আদদারীকে এ মর্মে নির্দেশনা দিলেন যে, তারা যেন লোকদেরকে নিয়ে রমজানের রাতে ১১ রাকাত কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করে। (মুয়াত্তা মালেক: ১১৫ নং হাদিস)। এই হাদিসের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয় যে তারাবির নামাজ সকলের জনই ৮ রাকাত।
তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া আজকের এই হেডিং এ জানিয়ে দিব। বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশে প্রচলিত অর্থে তারাবিকে কেন্দ্র করে দোয়া পড়ে থাকে। প্রতি চার রাকাত পর পর মূলত দোয়াটি পড়া হয় থাকে। বিশেষকরা যারা ২০ রাকাত তারাবিহ আদায় করে তারা এই দোয়াটি পড়ে। প্রতি ৪ রাকাত পর পর এই দোয়াটি পড়া হয়ে থাকে। চলুন আগে দোয়াটি জেনে নিই-
আরবি উচ্চারণ: سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ
বাংলা উচ্চারণ: সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রুহ।
এখন আপনারা দোয়া জেনে গেলেন। কিন্তু আপনাকে আগে যাচাই করতে এই সূরা কোথায় থেকে উৎপত্তি। আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে আপনি এই সূরা পেলেন কোথায়? এই সূরার পেছনে দলিল কোথায়? এর সৎ উত্তর কোথাও নেই। আপনি কুরআন হাদিসের কোথাও এই সূরা বা দোয়া খুঁজে পাবেন না। এটি একটি প্রচলিত দোয়া। যার কোন ভিত্তি নেই। ইমাম সাহেব ৪ রাকাত পর যে ব্রেক দেয় সেটি মূলত রেস্ট করার জন্য। আপনি সেখানে অন্য দোয়া দরুদ পড়েন। সেকানে কোন সমস্যা নেই। তবে এই দোয়ার কোন ভিত্তি নেই। তাই কখনোই এই দোয়া পড়বেন না। যারা এই দোয়া পড়তে বলবে। তাদের কাছে থেকে আগে সত্যতা যাচাই করবেন।
তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ
তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ অনেকেই জানতে চান। আবার অনেকেই পড়ে কিন্তু অর্থ জানেন না। প্রতিদিন তারাবির নামাজ শেষে মসজিদগুলোতে একটি দোয়া পড়া হয়। একপ্রকার বলা চলে প্রচলিত অর্থে এই মোনাজাত গুলো করা হয়। কেন করা হয়, কীসের ভিত্তিতে করা হয় এগুলোর কোন সঠিক উত্তর কোথাও পাওয়া যায় নি। আগে চলুন তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ জেনে নিই-
আরবি উচ্চারণঃ اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বার, ইয়া খালিলু ইয়া বার্রু। আল্লাহুমা আজিরনা মিনান নার। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
আরো পড়ুনঃ সিদরাতুল মুনতাহা নামের অর্থ - জেনে নিন আরো ৫০টি নাম
প্রথমত আপনাদের জানার ও বিদাতমুক্ত থাকার উদ্দেশ্যে আপনাদের একটি স্পষ্ট বিবৃতি জানিয়ে দিই দেটা হলো সম্মিলিত মোনাজাত বিদাত বিদাত বিদাত। এটা আমি বলছি না। এটা বলছে বাংলাদেশের বড় বড় মুহাদ্দিস ও আলেমাগণ। আপনি যদি মক্কা ও মদিনার দিকে খেয়াল করেন তাহলে সেখানেও সম্মিলিত মোনাজাত হয় না। এখন আপনাদের প্রশ্ন হতে পারে তাহলে কি মোনাজাত করব না? আপনি অবশ্যই একাকি মোনাজাত করতে পারবেন। এতে কোন বাঁধা নেই। যেখানে কথা হবে আপনার এবং আল্লাহর মধ্যে। আর এই তারাবি কে কেন্দ্র করে মোনাজাত বা বিশেষ মোনাজাতের কুরআন ও হাদিসের কোথাও উল্লেখ নেই। তাই আমরাও এই সূরা পড়বো না।
মহিলারা মসজিদে গিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবে কি?
মহিলারা মসজিদে গিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবে কি? এটা অনেকের মনেই প্রশ্ন থেকে থাকে। এই বিষয়টি নিয়ে সেই সাহাবিদের সময় থেকেই বিভিন্ন ইখতেলাফি মাসাআলাহ্ চলে আসছে। তবে কিছু কিছু হাদিস রয়েছে যেগুলো থেকে মূলত বিভিন্ন পরিষ্কার করা হয়েছে মহিলারা তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবে কি না! চলুন হাদিসের আলোকে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-
হযের উম্মে হুমাইদ আস সাআদী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার পেছনে নামাজ আদায় করতে চাই। নবী করীম (সা.) বললেন,
قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّينَ الصَّلاةَ مَعِي وَصَلاتُكِ فِي بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ وَصَلاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلاتِكِ فِي دَارِكِ وَصَلاتُكِ فِي دَارِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ وَصَلاتُكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي مَسْجِدِي قَالَ فَأَمَرَتْ فَبُنِيَ لَهَا مَسْجِدٌ فِي أَقْصَى شَيْءٍ مِنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهِ فَكَانَتْ تُصَلِّي فِيهِ حَتَّى لَقِيَتْ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ
অর্থঃ আমি ভালো করি জানি, তুমি আমার পেছনে নামাজ আদায় করতে চাও। তবে তোমার জন্য তোমার ঘরে নামাজ আদায় করা অন্য ঘরে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার বাড়িতে নামাজ আদায় করা কওমের এলাকার মসজিদে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর ওই মসজিদে নামাজ আদায় করা আমার মসজিদের নামজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। (মাসনাদে আহমাদ খন্ড নং:৬ হাদিস নং: ২৭২০২)
এখান থেকে বোঝা যায়, মহিলাদের জন্য নামাজ সবথেকে ভালো জায়গা হলো তার ভেতরের ঘর। তবে মসজিদে নামাজ পড়ারও অনুমতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে রয়েছে কঠোর নির্দেশনা। যা মেনে আপনাকে মসজিদে জেতে হবে। যেহেতু আমাদের বেশিরভাগ মসজিদে মেয়েদের নামাজের ব্যবস্থা করা হয় না। যেই সকল মসজিদ গুলোতে মেয়েদের নামাজের ব্যবস্থা করা হয় সেখানে কঠোর নির্দেশনা মেনে যেতে হবে।
মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়ার শর্ত সমূহ
১। -أن تؤمن الفتنة - সে নিজে ফিতনায় পড়া অথবা তার দ্বারা অন্য কেউ ফিতনায় পড়ে বা ফিতনাগ্রস্থ হওয়া থেকে আশাংকামুক্ত হতে হবে।
২। أن لا يترتب على حضورها محذور شرعي - সেখানে তার উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে শরিয়াকর্তৃক নিষিদ্ধ কোন কাজ সংঘঠিত করা যাবে না।
৩। أن لا أذن للمرأة بالخروج للمسجد وفق الأحكام الآتية - রাস্তায় অথবা মসজিদে কোন প্রকার ভিড় করা যাবে না।
৪। أن تخرج تَفِلَة . أي : غير متطيبة - কোন প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে না।
৫। أن تخرج متحجبة غير متبرجة بزينة - পরিপূর্ণ হিজাব পরিধান করতে হবে। যাতে কোন প্রকার সৌন্দর্য প্রকাশ না পায়।
৬। إفراد باب أذن للمرأة بالخروج للمسجد وفق الأحكام الآتية - নারীদের জন্য আলাদাভাবে প্রবেশ থাকতে হবে। যেন পুরুষদের সাথে কোনভাবে সম্মুখীন না হয়।
৭। تكون صفوف النساء خلف تزاحم الرجال في الطريق ولا في الجامع - নারীদের কাতার পুরুষদের কাতারের পেছনে হতে হবে। যদি সম্ভব হয় মেয়েদের আলাদা জামাতের ব্যবস্থা করার সেটি করতে হবে।
৮। خير صفوف النساء آخرها بخلاف الرجال - নারীদের কাতার হলো সর্বশেষ কাতার যা সর্বোত্তম আর পুরুষদের কাতার হলো তার বিপরীত।
৯। تخرج النساء من المسجد قبل الرجال ، وعلى الرجال الانتظار حتى انصرافهن إلى دورهن ، كما في حديث أم سلمة رضي الله النساء خلف الرجال - নারীরা পুরুষদের আগে মসজিদ থেকে বের হবে। নারীরা ঘরে পৌঁছা পর্যন্ত পুরুষরা অপেক্ষা করবে।
আজকের পোস্ট বিষয়ক সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
১। মহিলারা কি মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে পারেন?
উত্তরঃ সাধারণত মহিলাদের জন্য মসজিদে তারাবির নামাজ পড়া সুপারিশ করা হয় না। বাড়িতে পড়াই উত্তম।
২। তারাবির নামাজ কত রাকাত?
উত্তরঃ তারাবির নামাজ ৮ রাকাত। ২ রাকাত ২ রাকাত করে পড়তে হয়।
৩। মহিলারা কি জামাতে তারাবির নামাজ পড়তে পারেন?
উত্তরঃ হ্যাঁ, যদি মাহরাম পুরুষ ইমামতি করেন এবং মহিলারা পর্দার মধ্যে থাকেন, তাহলে জামাতে পড়া যেতে পারে।
আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা জানলাম অনেক কন্ট্রভারশিয়াল টপিক সম্পর্কে। তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের, তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল, কয় রাকাত নামাজ আদায় করবেন সকল বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যেহেতু তারাবির নামাজ মহিলাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি সঠিকভাবে আদায় করা উচিত। আশা করি উপরে তথ্যগুলো আপনার জন্য সহায়ক হবে।
এইরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কারণ আমরা আমদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরণের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
আবির ইনফো টেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url