ভালোবাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার আমল ও ৫টি কার্যকরী দোয়া

ভালোবাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার আমল ও দোয়া আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। আমরা অনেকেই সময়ের সাপেক্ষে একজন অপরজন কে ভালোবেসে ফেলি। যার কারণে আমরা খুব দ্রুত বিয়ে করার চেষ্টা করি। আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে সারা জীবনের জন্য পেতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

ভালোবাসার-মানুষকে-তাড়াতাড়ি-বিয়ে-করার-আমল-ও-৫-টি-কার্যকরী-দোয়া-1

আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো, ভালোবাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার ১০টি কার্যকরী দোয়া ও আমল, বিয়ে করা সুন্নাত নাকি ফরজ, কীভাবে ইসলামি শরিয়া মেনে বিয়ে করবেন, ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী বিয়ের দেনমোহর কত হোয়া উচিত। সকল কিছুর বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের আর্টিকেলে।

সূচীপত্রঃ ভালোবাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার আমল ও ৫টি কার্যকরী দোয়া

ভালোবাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার আমল

ভালোবাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার আমল করার মাধ্যমে দ্রুত বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ হতে পারবেন। আমার আপনার মতো অনেকেই সমাজে রয়েছে যাদের বিয়ে হয় না বা বিয়ে হতে অনেক সমস্যার সম্মুখীণ তে হয়। সেটা পারিবারিক বা সামাজিক উভয়ই ক্ষেত্রেই বাধা হয়ে থাকে। আজকের এই হেডিং এ আপনাদের এমন কিছু আমল জানিয়ে দিব যা আপনার জীবনকে পরিবর্তন ও বিয়ের সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

  • প্রথমত আপনাকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। নামজ শেষে আল্লাহর কাছর মন খুলে দোয়া করতে হবে। পূর্বের খারাপ কাজগুলোর জন্য তওবা পড়ে আল্লাহর নিকট মাফ চেয়ে নিবেন।
  • আপনার যদি কোন প্রকার খারাপ অভ্যাস থাকে সেগুলো সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করতে হবে এবং সেগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে।
  • সব সময় ইশতেগফার পাঠ করতে থাকবেন। আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ - হা ওয়া আতূবু ইলাহি, আস্তাগফিরুল্লাহ রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিও ওয়া আতুবু ইলাহি। এগুলো অবসর সময়ে পড়তে থাকবেন।

  • এরপর প্রতিনিয়ত ইশরাকের নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন। এই নামাজটি হলো ২ রাকাত। সকালে ৮ টা থেকে ৯টার মধ্যে পড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এই সময় আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে কাঁদতে থাকবেন আর আল্লাহর কাছে আপনার চাওয়া পাওয়া গুলো ভিক্ষা চাইবেন। আশাকরা যায় আল্লাহ আপনাকে কখনোই নিরাশ করবেন না।
  • নিয়মিত হাজতের নাম পড়তে পারেন। যদিও এটি নফল নামাজ। তবে এই নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। এই নামাজ পড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো শারীরিক ও মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণের জন্য। এই নামজ ফরজ নামাজের মতই তবে ২ রাকাত। আপনি চাইলে ৪ রাকাত ও পড়তে পারেন।
  • মাঝে মাঝে চেষ্টা করবেন তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার। আমরা সকলেই জানি তাহাজ্জুদের নামাজের কত পাওয়ার ও ফজিলত। তাই গভীর রাতে আল্লাহর কাছে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আপনার সকল সমস্যার কথা মুনাজাতে তুলে ধরবেন। আল্লাহ আপনাকে আপনার পাওনা যোগ্যটুকু অবশ্যই দিবে।
  • গোপনে দান করার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- "তোমরা এমন ভাবে দান করো যাতে ডান হাত দিয়ে দিলে বাম হাত যেন টের না পাই"।

  • সর্বশেষ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করবেন তা হলো রোজা বা সিয়াম রাখা। আপনার ভালোনাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি পাওয়ার কার্যকরী আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম পাওয়ারফুল একটি আমল।
উপরোক্ত আমলগুলো প্রতিনিয়ত করার চেষ্টা করবেন। অন্ততপক্ষে যতদিন না আপনার ভালোবাসার মানুষকে না পাচ্ছেন। তবে একজন সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে আপনাকে আমল গুলো সারাজীবনের জন্য করে যেতে হবে এতে আপনার ইহকাল ও আখিরাত দুটোই উজ্জ্বল হবে।

৪০ দিনের মধ্যে বিয়ে হওয়ার আমল

৪০ দিনের মধ্যে বিয়ে হওয়ার আমল করার মাধ্যমে আপনি মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে খুব সহজেই আসতে পারবেন। আল্লাহ তায়ালার কাছে কোন কিছুর কমতি নেই। আল্লাহ তায়ালা সকল কিছু দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তবে আপনাকে তা চেয়ে নিতে হবে। আর এই চাওয়ার মাধ্যমটিই হলো আমল। আপনি যখন কোন ভালো কিছু করার জন্য আমল করবেন তখন আল্লাহ তায়ালা নিজেই তা আপনাকে পাওয়াই দেই। এক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে একটি দোয়া উল্লেখ করে দিয়েছেন।

                                                                            رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণঃ রাব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুরবিয়্যাতিনা কুরবাতা আ'ইউন, ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা। 

আরো পড়ুনঃ বাংলা ইংরেজি আরবি ক্যালেন্ডার ২০২৪

অর্থঃ "হে আমাদের রব, আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা আমাদের চোখ শীতলকারী হবে। আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শ করুন"। (সুরা: ফুরকান, আয়াত নং: ৭৪)

রসুল (সা.) আরও বলেছেন, "তোমাদের কাছে এমন কোনো ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সঙ্গে (তোমাদের মেয়েদের) বিয়ে দাও। তোমরা যদি তা না কর, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে"। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৯৬৭)।

আরো একটি হাদিসে হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:"তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে, আর যে ব্যক্তি বিয়ের সামর্থ্য না রাখে সে যেন রোজা পালন করে। কেননা রোজা তার কামভাবকে দমন করবে"। (নাসায়ি, হাদিস : ২২৪১)।

এছাড়া আপনি সবসময় ইস্তেগফার পাঠ করতে থাকবেন-     اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ 

উচ্চারণঃ‘আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’ 

অর্থঃ আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরজীবী, চিরস্থায়ী এবং আমি তার কাছে তাওবা করছি।

সুরা আদ-দোহা সহ সুরা কাসাসের এই আয়াতটি পাঠ করুন-                         

فَسَقَى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّى إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ 

উচ্চারণঃ ‘ফাসাক্বা লাহুমা ছুম্মা তাওয়াল্লা ইলাজজিল্লি ফাক্বালা রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খায়রিং ফাক্বির'।

অভিভাবককে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি করার শক্তিশালী দোয়া

অভিভাবককে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি করার শক্তিশালী দোয়া আল কুরআনে বলা হয়েছে। আজকাল আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা স্ট্যাটাস দেখে তাদের মেয়েদের বা ছেলেদের বিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় বিবাহের পর দাম্পত্য জীবনে কলহ দেখা দেয়। আবার অনেকেই আছে যারা তাদের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করবে কিন্তু কোন এক পক্ষের পরিবার তা মেনে নিতে ভাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমরা অসহায় বোধ করি।

অসহায় বোধ করার কোন কিছুই নেই। আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। আপনাদের একটি আমল জানিয়ে দিই ইনশাল্লাহ এই আমলটি করার মাধ্যমে আপনার অভিভাবক বা যার পক্ষ থেকে মানা হচ্ছে না তাদের রাজি করানোর জন্য অনেক কার্যকরী হবে। আপনি প্রতিদিন সূরা ত্বোয়া-হা ৩৯ নং আয়াত 

         أَنِ ٱقْذِفِيهِ فِى ٱلتَّابُوتِ فَٱقْذِفِيهِ فِى ٱلْيَمِّ فَلْيُلْقِهِ ٱلْيَمُّ بِٱلسَّاحِلِ يَأْخُذْهُ عَدُوٌّ لِّى وَعَدُوٌّ لَّهُۥ وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِّنِّى وَلِتُصْنَعَ عَلَىٰ عَيْنِىٓ

উচ্চারণ: আনিকযিফীহি ফিততা-বূতি ফাকযিফীহি ফিল ইয়াম্মি ফালইউলকিহিল ইয়াম্মুবিছছাহিলি ইয়া’খুযহু ‘আদুওউললী ওয়া ‘আদুওউল্লাহূ ওয়াআলকাইতু‘আলাইকা মাহাব্বাতাম মিন্নী ওয়ালিতুসনা‘আ ‘আলা-‘আইনী।

এই আয়াতটি আপনি ভাইলেব ৭ বার অথবা ২১ বার অথবা ৪১ বার পাঠ করতে পারেন। এই আয়াতটি আমল করবেন আসর ও এশার ফরজ নামাজের পরে।   এশার নামজ শেষে ইস্তেগফার পাঠ করার পে প্রথমে ৩ বার দরুদে ইব্রাহিম পড়বেন। তারপর সূরা ত্বোয়া-হা এর আয়াতটি পড়বেন। এরপর আল্লাহর কাছে মন খুলে দোয়া করবেন। আপনি বৈবাহিক বিষয়ের সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য দোয়া চাইবেন। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সমস্যা থেকে পরিত্রাণ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। আমিন।

ইসলামি শরিয়াতে সুন্নতি বিয়ের নিয়ম

সুন্নতি বিয়ের নিয়ম জানা আমরা মুসলিম হিসেবে জানা দরকার। যেহেতু আমরা মুসলিম সেহেতু আমাদের অবশ্যই ইসলামি শরিয়া মেনে বিয়ে করা সুন্নত। যেহেতু বিয়ে একটি পবিত্র সম্পর্ক সেহেতু এখানে ইসলাম কে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। সেহেতু চলুন জেনে নেয়া যাক ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী সুন্নতি বিয়ের নিয়ম-  

ধাপ-১: প্রথমে মেয়ের অর্থাৎ কনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কখনোই উভয়ের মতামত ছাড়া বিয়ে করানো উচিত নয়। উভয়ের সম্মতিতেই বিয়ে করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৯)

ধাপ-২: যদি অভিভাবক বিবাহ পড়াতে সক্ষম হয় তাহলে অভিভাবকই বিয়ে পড়াবেন। আর যদি অভিভাবক দিয়ে পড়াতে সক্ষম না হয় তাহলে যে ব্যক্তি সক্ষম তিনি বিবাহ পড়াবেন। এর তিনি বিবাহের খুতবা পাঠ করবেন।

ধাপ-৩: এরপর মেয়ের অভিভাবক ছেলের সামনে যাতে অরঃপর মেয়ের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে ছেলেকে শোনাবেন। এরপর তিনি বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবেন। এটাকে ইসলামের ভাষায় বলা হয় ইজবা। বলা রাখা আবশ্যক অভিভাবকের সম্মতি ব্যাতিত কোন বিয়ে হওয়া সম্ভব নয়। নবী করিম (সা.) বলেন," অভিভাবক ছাড়া কোন বিবাহ নেই"। (তিরমিজি, হাদিস:১১০১)

আরো পড়ুনঃ মানসিক চাপ থেকে মুক্তির উপায় - মানসিক চাপ কমানোর ৬টি ঘরোয়া সমাধান

ধাপ-৪: এরপর যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি হবু বরের সামনে জোরা করে বলবেন অমুকের মেয়ে অমুককে এত টাকা মোহরানায় আপনার নোকট বিবাহ দিলাম। আপনি বলুন কবুল আমি তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলাম আলহামদুল্লিহা। এরপর সকলেই জোরে করে পড়বে আলহামদুল্লিহা। দুই জনকে সাক্ষী রেখে এভাবে পর পর আরো ২ বার কবুল পড়াতে হবে। কারণ ৩ বার কবুল পড়া উত্তম। তবে যদি বর বোবা হয় তাহলে তিনি ইশারা বা লিখার মাধ্যমে কবুল গ্রহণ করতে পারবে।

ধাপ-৫: এরপর যিনি বিবাহ পড়াচ্ছেন তিনি মেয়ের কাছে যাবেন। মেয়ের বাবা মেয়ের কাছে থেকে অনুমতি গ্রহণ করবেন। তাহলেই বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

ধাপ-৬: এরপর সকলেই একটি দোয়া পাঠ করবেন-                     بارك الله لكما وبارك عليكما وجمع بينكما في خير.

উচ্চারনঃ ‘বা-রাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বা-রাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খায়ের।’

অর্থ : ‘আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত দিন ও তোমাদের দুজনকে কল্যাণের সঙ্গে মিলিত করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৯১)

বিয়ে করা সুন্নত নাকি ফরজ

বিয়ে করা সুন্নত নাকি ফরজ এটা অনেকের মনেই প্রশ্ব থাকে। এটার উত্তর হলো বিয়ে করা সুন্নত। যুগে যুগে নবী রাসুল এসেছেন। তারাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। আল্লাহর রাসুলগণের চিরায়িত নীতি অনুযায়ী বিয়ে করা সুন্নত। তবে এটা কখনো কখনো ফরজ হয়ে যায়। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাহ এর পরিমাণের ওপর। এখন অনেকেই ভাববেন গুণাহ এর সাথে বিয়ের সম্পর্ক কোথায়? এখানে একটি সম্পর্ক আছে।

ভালোবাসার-মানুষকে-তাড়াতাড়ি-বিয়ে-করার-আমল-ও-৫টি-কার্যকরী-দোয়া-2

দেখুন বিবাহের যেহেতু একটি বয়স আছে। যখন ওই বয়স পার হয় বা তা বয়স চলাকালীন অনেকেই অনেকরকম জেনার সাথে জড়িত হয়ে যেতে পারে। যা ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষমার যোগ্য নয়। তাই যদি কেউ জেনায় কোন ভাবে লিপ্ত হয় বা লিপ্ত হোয়ার চেষ্টা করে সে ক্ষেত্রে তার জন্য বিয়ে ফরজ। রাসুল (সা.) একটি হাদিসে বলেন, তোমাদের  কাছে যদি এমন কোন ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্টি, তার সঙ্গে তোমার মেয়েদের বিয়ে দাও। 

তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার উপায়

তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার উপায় এ আপনাকে প্রথমত আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখতে হবে। আমরা যারা মুসলিম তারা সকলেই জানি আমাদের ভাগ্য অনেক আগে থেকেই আল্লাহ তায়ালা লিখে রেখেছেন। সেটা পরিবর্তন করার সাধ্য পৃথিবীর কারো কাছেই নেই। আমরা শুধু এতটুকুই করতে পারি যা আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণঃ রাব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুরবিয়্যাতিনা কুরবাতা আ'ইউন, ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা। 

আরো পড়ুনঃ ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধা পাউডারের উপকারিতা - খেলে কী হয় ও খাওয়ার নিয়ম

অর্থঃ "হে আমাদের রব, আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা আমাদের চোখ শীতলকারী হবে। আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শ করুন"। (সুরা: ফুরকান, আয়াত নং: ৭৪)

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষে এই দোয়াটি পাঠ করুন। সেই সাথে উপরে ভালোবাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার আমল গুলো নিয়ে বলা হয়েছে সেগুলো অবশ্যই নিয়মিত ভাবে আমল করলে আর্ল্লহ তায়ালা আমাদের অবশ্যই সাহায্য করবেন।

দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল

দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল করতে হলে আপনাকে কিছু সূরা রয়েছে যে গুলো মুখস্থ করতে হবে। কারণ সেগুলো আপনাকে প্রতিনিয়ত একাধারে পাঠকরে যেতে হবে। আমল করার অর্থ হলো কোন কিছুকে সারা জীবনের জন্য আকড়ে ধরে থাকা। আপনি যে শুধু আপনার কাজের জন্য বা কাজ শেষে আর সেগুলো পাঠ করবেন না এমনটা যেন না হয়। তাহলে চলুন জেনে আসি দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল-

  • ফরজ নামাজের পর প্রতিদিন সূরা ইয়াসিন পাঠ করুন। 
  • ফরজ নামাজ শেষে সূরা দোহা ও সূরা কাসাসের ২৪ নং আয়াত পাঠ করুন। মেয়েদের সর্বোত্তম বিবাহ প্রস্তাব পেতে প্র্যেক ফরজ নামাজের পর ১১ বার করে পাঠ করুন। আর যদি কোন ছেলে এই আয়াতটি ১০০ বার করে পাঠ করে তাহলে তার জন্য উত্তম মেয়ে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।  فَسَقَى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّى إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ  উচ্চারণঃ ‘ফাসাক্বা লাহুমা ছুম্মা তাওয়াল্লা ইলাজজিল্লি ফাক্বালা রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খায়রিং ফাক্বির'।
  • আল্লাহর নামে বেশি বেশি জিকির করা।
  • ১১ বার দরুদ শরীফ, ৩১৩ বার আল্লাহু। টানা ৪১ দিন এই আমলটি করতে থাকুন ইনশাল্লাহ ভালো একটি ফল পাবেন।
  • প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষে সূরা তাওবার ১২৭ নং আয়াত পাঠ করুন- وَإِذَا مَآ أُنزِلَتْ سُورَةٌ نَّظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ هَلْ يَرَىٰكُم مِّنْ أَحَدٍ ثُمَّ ٱنصَرَفُوا۟ صَرَفَ ٱللَّهُ قُلُوبَهُم بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُونَ উচ্চরণঃ ওয়া ইযা-মাউনঝিলাত ছূরাতুন নাজারা বা‘দুহুম ইলা-বা‘দিন হাল ইয়ারা-কুম মিন আহাদিন ছু ম্মান সারাফূ সারাফাল্লা-হু কুলূবাহুম বিআন্নাহুম কাওমুল লা-ইয়াফকাহূন। এই আয়াতটি প্রতি ফরজ নামাজের পরে ১১০০ বার সেসাথে ১৯ বার বিসমিল্লাহ, ১০০ বার দূরদ শরীফ।
  • সূরা মরিয়ম পড়তে হবে।

  • সূরা মুজ্জামিল পাঠ করতে হবে।

বিয়ের দেনমোহর কত টাকা হওয়া উচিত

বিয়ের দেনমোহর কত টাকা হওয়া উচিত এটা জানা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। আজকাল আমাদের সমাজে এই দেনমোহর একটি ফ্যাশানে পরিণতি হয়েছে। যা পুরোপুরি ইসলাম পরিপন্থী। দেনমোহর পরিশোধের পরেই আপনি আপনার স্ত্রীকে ছিুতে পারবেন। এটিই ইসলামের নিয়ম। আজকাল এই দেনমোহরকে ফ্যাশানে পরিণতি করে মোটা অঙ্কের টাকা দেনমোহর বাঁধা হয়ে থাকে। যা ছেলেদের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। আজকে আমরা জানবো বিয়ের দেনমোহর কত টাকা।

ভালোবাসার-মানুষকে-তাড়াতাড়ি-বিয়ে-করার-আমল-ও-৫টি-কার্যকরী-দোয়া-3

আল্লাহ তায়ালা বলেন, বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবন জীবিকা সীমিত,আমি তাকে যা দান করেছি সেই অনুযায়ী সে ব্যয় করবে। (সূরা তালাক,আয়াত:৭)। কুরআন ও হাদিসে দেনমোহরের সর্বোচ্চ কত টাকা দিতে হবে এটা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা নেই। কেউ যদি চাই তার স্ত্রীকে মোটা অঙ্কের টাকা দেনমোহর দিবে সে ক্ষেত্রে সে দিতে পারে। আর সর্বনিম্ন দেনমোহর ১০ দিরহাম।। এর নিচে দেনমোহর দিলে তা হবে না।

আজকের পোস্ট বিষয়ক সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

১। ভালোবেসে বিয়ে করা জায়েজ নাকি না জায়েজ?

উত্তরঃ ভালোবেসে বিয়ে করা অবশ্যই না জায়েজ। আপনি যদি বিয়ের আগে কোন অপরিচিত প্রয়োজনীয় কাজের বাইরে ছেলে বা মেয়ের সাথে কথা বলে থাকেন তাহলে আপনি যেনার মতোব গুনাহ করলেন। তাই ভালোবেসে বিয়ে করা সম্পূর্ণ হারাম। 

২। তাড়াতাড়ি বিয়ে করার জন্য আমল করা যাবে কি?

উত্তরঃ অবশ্যই তাড়াতাড়ি বিয়ে করার জন্য আমল করা যাবে। আপনি একজন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখুন এবং উপরে উল্লিখিত আমলগুলো যথাযথ ভাবে পালনের চেষ্টা করুন। আল্লাহ তায়ালা আপনার তাড়াতাড়ি বিয়ে করার তৌফিক দান করবেন।

৩। কাউকে পছন্দ করলে তাকে কীভাবে বিয়ে করব?

উত্তরঃ আপনি যদি কাউকে পছন্দ করে থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব আপনার অভিভাবকদের দিয়ে বা নিজে গিয়ে মেয়ের অভিভাবককে বিয়ের প্রস্তাব দিন। যদি আপনার অভিভাবক ও তাদের অভিভাবক এবং মেয়ে নিজে রাজি থাকে তাহলে আপনি বিয়ে করে নিতে পারেন।

৪। বিয়ের দেনমোহর সর্বোচ্চ কত টাকা এবং সর্বনিম্ন কত টাকা হোয়া উচিত?

উত্তরঃ বিয়ের দেনমোহর সর্মোচ্চ কত টাকা দিতে হবে এটা কোথাও উল্লেখ করা নাই। আপনি যদি বিত্তবান হন তাহলে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর দিবেন। আর সর্বনিম্ন দেনমোহর ১০ দিরহাম। এর নিচে দেনমোহর দেওয়া ও নেওয়া যাবে না।

৫। দেনমোহর পরিশোধ না করে কি বিয়ে হবে?

উত্তরঃ দেনমোহর পরিশোধ না করে আপনি আপনার স্ত্রীকে কোনভাবেই হালাল অর্থাৎ মিলিত পারবেন না। আপনাকে বিয়ের আসরেই তাকে তার পাওনা টাকা অর্থাৎ দেনমোহরের টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে মেয়ে যদি দেনমোহর মাফ করে দেয় সেক্ষেত্রে আপনার আর কোন বাধা থাকবে না। তবে আপনার দ্বায়িত্ব আপনার স্ত্রীর হক পূরণ করে দেওয়া। 

আমাদের শেষকথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা জানলাম ভালোবাসার মানুষকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার আমল ও ১০টি কার্যকরী দোয়া। সেইসাথে আরো জানলাম বিয়ের করার সুন্নতি নিয়ম, বিয়েতে দেনমোহর কত টাকা সকল কিছু বিস্তারিত জেনে নিয়েছি। তবে একটি কথা না বললেই নয় যারা ভালোবাসা নামক অবৈধ সম্পর্কে আছেন তাদের যত দ্রুত সম্ভব বিয়র করে নিন। আর তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে অবৈধ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে দুইজনে আমল গুলো করতে থাকুন। ইনশাআর্ল্লহ আল্লাহ তায়ালা আপনাদের মনের আশা খুব দ্রুত পূরণ করে দিবেন। আমিন।

এইরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কারণ আমরা আমদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরণের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আবির ইনফো টেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url