ব্রণ দূর করার ইসলামিক ১০টি উপায় - মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির দোয়া

ব্রণ দূর করার ইসলামিক উপায় অনেকেই এটা শুনেই হয়তো অবাক হচ্ছেন। ইসলামিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের জীবনের প্রতিটি অংশের জন্য সুন্দরভাবে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে।

ব্রণ-দূর-করার-ইসলামিক-উপায়-1

আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব, ব্রণ দূর করার ইসলামিক উপায়, মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির দোয়া, মুখের ব্রন ও ব্রনের দাগ দূর করার দোয়া, ৭ দিনে ব্রণ দূর করার উপায়, ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় সহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশাকরি শেষ পর্যন্ত পড়ে উপকৃত হবেন।

সূচীপত্রঃ ব্রণ দূর করার ইসলামিক উপায় - মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির দোয়া

৭ দিনের জন্য ব্রণ দূর করার প্রতিদিনের রুটিন

৭ দিনের জন্য ব্রণ দূর করার প্রতিদিনের রুটিন মেনে চললে আপনার ত্বকে অনেকটাই ব্রণ কমে যাবে। ত্বকের যত্ন সবসময় নিয়ম মাফিক করতে হয়। ৭ দিনে ব্রণ দূর করতে নিয়মিত ত্বকের যত্ন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সঠিক সময়ে সঠিক যত্ন গ্রহণ করে আমরা ব্রণ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করলে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল থাকবে, এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক ব্রণ দূর করার ৭ দিনের রুটিন-

দিন সকালের রুটিন রাতের রুটিন
প্রথম দিন ত্বক পরিষ্কার করা ও টোনার ব্যবহার করা টি ট্রি অয়েল ব্যবহারে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রভাব
দ্বতীয় দিন এক্সফোলিয়েশন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
তৃতীয় দিন টোনার ও টি ট্রি অয়েল টি ট্রি অয়েল ব্যবহার
চতুর্থ দিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার
পঞ্চম দিন স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি পান করা স্বস্থ্যকর ঘুম
ষষ্ঠ দিন স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে মেডিটেশন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে
সপ্তম দিন মুলতানি মাটি ও গোলাপ জলের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে ত্বক ময়েশ্চারাই

৭ দিনে ব্রণ দূর করার উপায় 

৭ দিনে ব্রণ দূর করার উপায় কার্যকর করতে কিছু নিমকানুন মেনে চলতে হবে। ত্বকের সমস্যা হিসেবে ব্রণ অনেকের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি সময়মতো ঠিকঠাক যত্ন না নিলে ত্বকের সৌন্দর্য হ্রাস পেতে পারে এবং আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলতে পারে। ব্রণ দূর করতে অনেকেই ত্বকের যত্নে অনেক প্রচেষ্টা করেন, তবে সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করলে এই সমস্যাটি সহজে সমাধান করা সম্ভব হয় না। এই লেখায়, ৭ দিনের মধ্যে ব্রণ দূর করতে কার্যকর কিছু উপায় ও নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা করা হলো-

প্রথম দিন: ত্বক পরিষ্কার করা

সুস্থ ত্বকের জন্য ত্বক পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ত্বক পরিষ্কার না থাকলে ত্বকে ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া জমে ব্রণ সৃষ্টি হয়।

  • ধাপ ১: ত্বক পরিষ্কারক (ক্লিনজার) ব্যবহার করে দিনে দুইবার মুখ ধুয়ে ফেলুন। যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তারা তেল নিয়ন্ত্রণকারী ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন।
  • ধাপ ২: ক্লিনজারের পরে ত্বকে একটি ভালো মানের টোনার ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স রক্ষা করে এবং অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে গোলাপ জল ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ত্বককে শীতল ও পরিষ্কার রাখে, যা ব্রণ কমাতে সহায়ক।

দ্বিতীয় দিন: এক্সফোলিয়েশন বা ত্বকের মৃত কোষ সরানো

ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ ব্রণ বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই সপ্তাহে অন্তত একবার এক্সফোলিয়েট করা জরুরি।

  • ধাপ ১: বেকিং সোডা বা চিনি ও মধুর মিশ্রণ ব্যবহার করে ত্বক স্ক্রাব করুন। এটি ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে নতুন কোষের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
  • ধাপ ২: চিনি ও মধু একত্রিত করে হালকা ঘষুন। এটি প্রাকৃতিক স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে এবং ব্রণ দূর করতে সহায়ক।  স্ক্রাবের পরে মুখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

তৃতীয় দিন: অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্যবহার করা

ব্রণের জন্য ব্যাকটেরিয়া দায়ী হতে পারে, তাই অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।

  • ধাপ ১: রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে টি ট্রি অয়েল লাগান। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমাতে সহায়ক। টি ট্রি অয়েল সরাসরি লাগানোর পরিবর্তে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভালো। এটি ত্বকের সংবেদনশীলতা হ্রাস করবে।

  • ধাপ ২: সকালে মুখ ধুয়ে ফেলুন এবং হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

চতুর্থ দিন: ত্বক ময়েশ্চারাইজ করা

ত্বক শুষ্ক থাকলে তা আরো তৈলাক্ত হতে পারে, ফলে ব্রণের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

  • ধাপ ১: একটি হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ত্বক আর্দ্র রাখুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।

  • ধাপ ২: রাতে ঘুমানোর আগে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকে শীতলতা প্রদান করে এবং ব্রণের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। গার্মেন্ট ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে ত্বকে শীতল অনুভূতি হয় এবং এটি ব্রণ দূর করতে সহায়ক।
পঞ্চম দিন: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা

খাদ্যাভ্যাস ত্বকের অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলে। ভেতর থেকে ত্বক সুস্থ রাখতে সঠিক খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন।

  • ধাপ ১: তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খাদ্য তালিকায় রাখুন। এগুলোতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ ত্বক সুস্থ রাখতে সহায়ক। শসা, তরমুজ, এবং বেলের মতো হাইড্রেটিং ফল ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত উপকারী।

  • ধাপ ২: পর্যাপ্ত পানি পান করুন। দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন দূর হয় এবং ত্বক সতেজ থাকে।
ষষ্ঠ দিন: স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করা

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস ব্রণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই মানসিক শান্তি বজায় রাখা প্রয়োজন।

  • ধাপ ১: যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন। এটি স্ট্রেস কমিয়ে মানসিক শান্তি দেয়। প্রতিদিন ১০ মিনিটের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করা যেতে পারে। এটি শরীর ও মন উভয়কে শান্ত রাখে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

  • ধাপ ২: ঘুম পর্যাপ্ত পরিমাণে নিন, কারণ ভালো ঘুম মানসিক প্রশান্তি আনতে সাহায্য করে এবং ত্বকের পুনরুজ্জীবন ঘটায়।
সপ্তম দিন: প্রাকৃতিক মাস্ক ব্যবহার করা

প্রাকৃতিক মাস্ক ত্বকের ওপর জাদুকরী প্রভাব ফেলতে পারে। ৭ দিনে ব্রণ দূর করতে কিছু কার্যকরী মাস্ক ব্যবহার করা যায়।

  • ধাপ ১: মুলতানি মাটি ও গোলাপ জল মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। এটি অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং ত্বককে পরিষ্কার রাখে। মুলতানি মাটি ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বক থেকে তেল শুষে নেয় এবং ব্রণ দূর করতে সহায়ক।

  • ধাপ ২: মাস্কটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন, তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ব্রণ দূর করার ইসলামিক উপায়

ব্রণ দূর করার ইসলামিক উপায় নিয়ে হয়তো অনেকেই জানার চেষ্টা করেন। ব্রণ একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা হলেও এটি অনেকের জন্য অস্বস্তিকর এবং আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে। ইসলামিক পদ্ধতিতে সুন্নাহ অনুসরণ করে এবং কিছু সহজ উপায়ে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই লেখায় ব্রণ দূর করার কিছু ইসলামিক পরামর্শ এবং সুন্নাহ নির্ভর কিছু প্রাকৃতিক উপায় আলোচনা করা হলো।

১. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা: পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মহানবী (সা.) বলেছেন, "পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক" (মুসলিম)। আমাদের ত্বক পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে আমরা ব্রণ দূর করতে সহায়তা করতে পারি। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে মুখ ধোয়া এবং ত্বকের পরিচর্যা করা ইসলামের নির্দেশনা।

সুন্নত অনুসারে মুখ ধোয়ার নিয়ম

  • প্রতিদিন পাঁচবার নামাজের পূর্বে অজু করা হয়। এতে আমাদের ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। মুখ ধোয়া শুধু পরিষ্কার রাখার জন্যই নয়, বরং এ থেকে অভ্যাসগতভাবে ত্বকের সজীবতাও বজায় থাকে।
২. প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করা

নবী করিম (সা.) বিভিন্ন প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করতেন, যা আমাদের ত্বকের জন্যও উপকারী হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বককে মসৃণ করে এবং ত্বকের উপরিভাগ থেকে ধুলোবালি ও জীবাণু দূর করে।

  • কালোজিরা তেল: এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে এবং ব্রণ দূর করতে সহায়ক। নবী (সা.) বলেছেন, "কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ঔষধ" (সহিহ বুখারি)। কালোজিরা তেল সামান্য পরিমাণে ব্রণের স্থানে ব্যবহার করলে এটি ব্রণ শুষ্ক করে ও দ্রুত নিরাময়ে সহায়তা করে।
  • প্রতিদিন রাতে অলিভ অয়েল দিয়ে ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করুন এবং সকালে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্রণ ও দাগের জন্য কার্যকর।
  • অলিভ অয়েলের সাথে মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখলে এটি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
 ৩. কালোজিরা ব্যবহার করা

ব্রণ দূর করার ইসলামিক উপায় গুলোর মধ্যে কালোজিরা খাওয়ার গুরুত্ব অনেক। নবি (সা.) বলেছেন, “কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ঔষধ” (সহিহ বুখারি)। কালোজিরায় রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা ত্বকের ব্রণ ও দাগ কমাতে সহায়ক।

  • কালোজিরা গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে ব্রণের স্থানে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • নিয়মিত কালোজিরা তেল সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং দাগ দূর হয়।
৪. রোজা রাখা

রোজা রাখা শুধু ইবাদত নয়, এটি আমাদের দেহ ও ত্বকের জন্যও উপকারী। দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার কারণে আমাদের দেহ থেকে অনেক ক্ষতিকর টক্সিন বের হয়ে যায়। ত্বকের টক্সিন মুক্তি পাওয়ার ফলে ত্বক সতেজ থাকে ও ব্রণ কমে। রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা ইবাদতের পাশাপাশি স্বাস্থ্যগতভাবে উপকৃত হতে পারি।

৫. অযথা মুখে হাত না দেওয়া

ইসলামিক আদর্শে বিনয়ী ও পরিশীলিত আচরণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মুখে অহেতুক হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, কারণ এতে ত্বকে জীবাণু লেগে যায় এবং ব্রণ সৃষ্টি হতে পারে। হাতের সাথে থাকা ধুলোবালি এবং জীবাণু মুখে ছড়িয়ে পড়লে ব্রণ বাড়তে পারে।

আরো পড়ুনঃ ৭ দিনে ফর্সা হওয়ার নাইট ক্রিম - মেয়েদের ফর্সা হওয়ার ফেসওয়াস

৬. হারবাল বা ভেষজ উপাদান ব্যবহার করা

প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান ত্বকের পরিচর্যায় অনেক উপকারী। ইসলামিক ঐতিহ্যে নিম, তুলসি, এলোভেরা ইত্যাদি ব্যবহার করা প্রচলিত। এদের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণের জীবাণু দূর করতে সহায়ক।

  • নিম পাতা: নিমে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান আছে যা ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে।
  • এলোভেরা: এলোভেরা রস ত্বকে শীতলতা প্রদান করে, যা ব্রণের প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
৭. হালাল ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

ইসলামিক শিক্ষায় হালাল ও পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ফাস্ট ফুড ও অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার ব্রণ বৃদ্ধি করে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ফলমূল, শাকসবজি, এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, "তোমরা যা পবিত্র ও হালাল, তা খাও" (সূরা আল বাকারাহ, ১৬৮)। পুষ্টিকর খাদ্য আমাদের শরীর ও ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৮. হজমশক্তি ঠিক রাখা

সুস্থ ত্বকের জন্য সঠিক হজম প্রয়োজন। মহানবী (সা.) তিন ভাগের একভাগ পেটে খাবার রাখার সুপারিশ করেছেন, বাকি একভাগ পানি এবং একভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখতে বলেছেন। খাবার ঠিকভাবে হজম হলে তা শরীরে সঠিকভাবে কাজে লাগে এবং ত্বকও সুস্থ থাকে।

৯. আল্লাহর উপর আস্থা ও ধৈর্য ধরা

অধৈর্য হলে তা মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে যা ব্রণ বাড়াতে সহায়ক। ইসলাম আমাদের ধৈর্য ধারণ করার জন্য উৎসাহিত করে এবং আল্লাহর উপর আস্থা রাখতে বলে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন" (সূরা আল বাকারা, ১৫৩)। ধৈর্য ধরে আল্লাহর উপর ভরসা করলে মানসিক চাপ কম থাকে এবং এর ফলে ত্বকও সুস্থ থাকে।

১০. আল্লাহর জিকির ও দুয়া

আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং ব্রণ দূর করতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করাও ইসলামিক উপায়ের অন্তর্ভুক্ত। কিছু বিশেষ দুয়া এবং জিকির পাঠ করলে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্রণ দূর করার জন্য ইসলামিক পদ্ধতি খুবই কার্যকর হতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার এবং আল্লাহর উপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধরা—এসব ইসলামিক নির্দেশনা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। আল্লাহর কাছে দুয়া করা এবং প্রতিনিয়ত সুন্নাহ অনুসরণ করা আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য ও সুস্থতা বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

মুখের ব্রন ও ব্রনের দাগ দূর করার দোয়া

মুখের ব্রন ও ব্রনের দাগ দূর করার দোয়া জানলে এই সমস্যা থেকে খুন সহজেই আপনি পরিত্রাণ পেতে পারবেরন। ব্রণ দূর করতে চিকিৎসা এবং যত্নের পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা একটি ইসলামিক পন্থা, যা মানসিক শান্তি এবং শারীরিক সুস্থতা আনতে সহায়ক। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য বিশেষ কিছু দোয়া ও আমল উল্লেখ করা হয়েছে, যা নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগমুক্তি ঘটতে পারে। এই হেডিং এ ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার কিছু বিশেষ দোয়া উল্লেখ করা হলো-

১. সূরা আল-ফাতিহা

কোনো রোগ নিরাময়ে সূরা আল-ফাতিহা একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হিসেবে বিবেচিত। মহানবী (সা.) সূরা আল-ফাতিহা সম্পর্কে বলেছেন, "এটি প্রতিটি ব্যাধির জন্য শিফা" (সহিহ বুখারি)

আমল:

  • পাঁচবার নামাজের পর, বিশেষ করে সকালে ও রাতে সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করতে পারেন।
  • নিয়মিত সূরা আল-ফাতিহা পড়ে আল্লাহর কাছে রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করুন।

২. সূরা ইয়াসিন

ইসলামিক ঐতিহ্য অনুসারে, সূরা ইয়াসিন শারীরিক এবং মানসিক রোগের নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকর। এ সূরা পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত পেতে পারি।

আমল:

  • ব্রণ ও দাগ দূর করার জন্য নিয়মিত ফজরের নামাজের পর সূরা ইয়াসিন পাঠ করুন।
  • সূরা ইয়াসিন পড়ে দোয়া করুন এবং আল্লাহর উপর আস্থা রাখুন।

৩. আল্লাহর নামসমূহ জপ করা

আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে কিছু নাম শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।

  • আল-শাফি: যার অর্থ “রোগমুক্তিদাতা”। আল্লাহকে এই নামে ডাকলে তিনি রোগমুক্তি দান করেন।
  • আল-জাব্বার: যার অর্থ “পরিপূর্ণ নিরাময়ের অধিকারী”।
আমল:
  • আল্লাহর নামে দোয়া করুন এবং অন্তত ১০০ বার করে “ইয়া শাফি” এবং “ইয়া জাব্বার” পড়ুন। আল্লাহর কাছে সুস্থতা কামনা করুন এবং ধৈর্য ধরুন।

৪. সূরা আল-ইখলাস, ফালাক, ও নাস পাঠ করা

ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বকের রোগ থেকে মুক্তির জন্য পবিত্র কোরআনের সূরা আল-ইখলাস, সূরা ফালাক, এবং সূরা নাস পড়া খুবই কার্যকর।

আমল:

  • রাতে ঘুমানোর আগে এই তিনটি সূরা পড়ে নিজেকে এবং নিজের ত্বককে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন।
  • হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে মাসাহ করুন।

৫. দুআ শিফা (রোগমুক্তির দোয়া)

নবী করিম (সা.) রোগমুক্তির জন্য বিশেষ কিছু দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, যা নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ রোগমুক্তি দান করেন।

দোয়া:

  • اللَّهُمَّ أَذْهِبِ الْبَأْسَ، رَبَّ النَّاسِ، وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًاআল্লাহুম্মা আযহিবিল বা’সা, রব্বান্নাস, ওয়াশফি আন্তাশ শাফি, লা শিফা’ ইল্লা শিফাউকা, শিফাউঁ লা ইউগাদিরু সাকামা)

  • অর্থ: “হে আল্লাহ! মানুষের রব, কষ্ট দূর করুন এবং রোগমুক্তি দিন, আপনি সর্বোত্তম নিরাময়কারী, আপনার নিরাময় ব্যতীত কোনো নিরাময় নেই” (সহিহ মুসলিম)।

  • প্রতিদিন ৩-৭ বার এই দোয়া পাঠ করুন এবং আল্লাহর কাছে ত্বকের সৌন্দর্য এবং রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করুন।

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির দোয়া

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির দোয়া ও সঠিক আমল করলে আপনার ত্বক হবে উজ্জ্বল ও সৌন্দর্য। ব্রণ দূর করার ইসলামিক উপায় জানার পশাপাশি উজ্জ্বলতা পাওয়ার দোয়াও জানা জরুরি।  পবিত্র কোরআন ও হাদিসে শারীরিক সুস্থতা, ত্বকের উজ্জ্বলতা, ও মনের প্রশান্তির জন্য বিভিন্ন দোয়া ও আমল উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ও আমল করা আমাদের শারীরিক ও মানসিক শান্তি দেয় যা বাহ্যিক সৌন্দর্যেও প্রকাশিত হয়। এই লেখায় আমরা মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য কিছু নির্দিষ্ট দোয়া, আমল নিয়ে আলোচনা করব-

(১) সূরা নূরের আয়াত ৩৫

পবিত্র কোরআনে মুখের ও আত্মার উজ্জ্বলতার জন্য দোয়া হিসেবে সূরা নূরের আয়াত ৩৫ উল্লেখিত হয়েছে। এই আয়াতটি আল্লাহর নূরের পরিচায়ক, যা মুমিনদের হৃদয়ে এবং চেহারায় প্রকাশিত হয়।

আয়াত:  اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ...

উচ্চারণ: "আল্লাহু নূরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ..."

অর্থ: "আল্লাহ আসমান ও জমিনের নূর..." (সূরা নূর, ২৪:৩৫)।

আমল:

  • প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর সূরা নূরের আয়াত ৩৫ পাঠ করুন এবং আল্লাহর কাছে হৃদয়ের ও মুখের উজ্জ্বলতার জন্য দোয়া করুন।
  • এই আয়াত নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহর নূর আপনার হৃদয়ে এবং মুখে প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ।
(২) দোয়া নূর

এই দোয়াটি মুখের উজ্জ্বলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দোয়া নবী করিম (সা.) নিয়মিত পাঠ করতেন।

দোয়া: اللهم اجعل في قلبي نورا وفي بصري نورا وفي سمعي نورا وعن يميني نورا وعن يساري نورا ومن فوقي نورا ومن تحتي نورا واجعل لي نورا

উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা ইজআল ফি কালবি নূরাও ও ফি বাসারি নূরাও ও ফি সামই নূরাও ও আন ইয়ামিনি নূরাও ও আন ইয়াসারি নূরাও ওয়া মিন ফাওকি নূরাও ওয়া মিন তাহতি নূরাও ওয়াজআল লি নূরান।"

অর্থ: "হে আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর সৃষ্টি করুন, আমার দৃষ্টিতে নূর, আমার শ্রবণে নূর, আমার ডানে নূর, আমার বামে নূর, আমার উপর নূর, আমার নিচে নূর, এবং আমার জন্য নূর দিন।"

আমল:

  • প্রতিদিন এই দোয়া অন্তত ৩ বার পাঠ করুন।
  • বিশেষ করে নামাজের পর এই দোয়া পাঠ করলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর নূর চেহারায় প্রকাশিত হয়।
ব্রণ-দূর-করার-ইসলামিক-উপায়-2

মুখের দাগ দূর করার দোয়া

মুখের দাগ দূর করার দোয়া এর গুরুত্ব অনেক। মুখের দাগ দূর করতে ইসলামিক প্রার্থনা এবং দোয়া করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা আধ্যাত্মিকভাবে অনেককে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে, আল্লাহ তাআলার দয়া এবং ইচ্ছার ওপর সব কিছু নির্ভর করে। দোয়া সহিহ নিয়তে পড়া হলে তাতে বরকত হতে পারে। এছাড়া মুখের দাগ দূর করার জন্য কিছু সুন্নত পরামর্শ এবং সচেতনতা জরুরি। এই লেখায় আমরা মুখের দাগ দূর করতে সাহায্যকারী কয়েকটি দোয়া ও ধর্মীয় পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

সুরা ফাতিহা ও আয়াতুল কুরসি পাঠ করা: সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি ত্বকের দাগ ও দুঃখ-দুর্দশা দূর করার জন্য অত্যন্ত বরকতময়। নিয়মিত ফজরের নামাজের পর সুরা ফাতিহা ও আয়াতুল কুরসি পাঠ করা সওয়াবের পাশাপাশি মনকে শান্তি দেয় এবং ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে সহায়ক বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।

সুরা আল-ইখলাস, আল-ফালাক এবং আল-নাস: আল-ইখলাস, আল-ফালাক এবং আল-নাস সুরাগুলোকে ত্বকের জন্য শক্তিশালী দোয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই তিনটি সুরা দিনে তিনবার করে পড়া মুখের দাগ দূর করতে আধ্যাত্মিক সুরক্ষা দেয়। এটি নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।

দোয়া ১: “আল্লাহুম্মা বারিক লি ফি ওয়াজহি ওয়া জাসাদি” এই দোয়াটি ত্বক ও শরীরের জন্য কল্যাণ কামনার প্রার্থনা। নিয়মিত এই দোয়া পাঠ করলে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে মুখের দাগ দূর হতে সহায়ক হতে পারে। এটি আল্লাহর কাছে চেহারার উজ্জ্বলতা এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রার্থনা।

আরো পড়ুনঃ সেনসিটিভ ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায় - জানুন ৮ টি গোপন টিপস

দোয়া ২: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা শিফা-ওয়া মুঝিলা, ইয়া শাফি” অর্থ: "হে আল্লাহ, আপনি আমাকে সম্পূর্ণ আরোগ্য দিন, হে সর্বশ্রেষ্ঠ আরোগ্যদাতা।" এই দোয়া নিয়মিত পড়লে মুখের দাগ দূর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ এতে আল্লাহর কাছে আরোগ্য কামনা করা হয়।

দোয়া ৩: “ইয়া নূরু, ইয়া হাদি”: “ইয়া নূরু” অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নামগুলোর একটি, যার অর্থ "আলো।" এই দোয়াটি বিশেষত ত্বকের জন্য বরকতময় মনে করা হয়। নিয়মিত এই নাম পড়লে মুখের দাগ ও কালোভাব দূর হতে পারে বলে অনেকের বিশ্বাস।

আল্লাহর ৯৯ নামের দোয়া: আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে কয়েকটি মুখের দাগ দূর করতে বিশেষ উপকারী বলে বিবেচিত। নিয়মিত “ইয়া জাব্বারু” এবং “ইয়া রহিমু” ১০০ বার করে প্রতিদিন পাঠ করলে দাগ দূর হতে সাহায্য করতে পারে। এটি ত্বকের সৌন্দর্য ও শুদ্ধতার জন্য প্রার্থনা করার একটি মাধ্যম।

মনে রাখতে হবে, দোয়ার মাধ্যমে বরকত পেতে হলে সহিহ নিয়ত থাকতে হবে এবং আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে। নিয়মিত দোয়া পড়া, ত্বকের যত্নে সুন্নত পদ্ধতি অনুসরণ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং হালাল ও পরিমিত খাবার গ্রহণ করা মুখের দাগ দূর করতে সহায়ক হতে পারে।আল্লাহর দয়ায় ও ইচ্ছায় এসব উপায়ের মাধ্যমে মুখের দাগ দূর করা সম্ভব, তবে সবসময় আল্লাহর উপর আস্থা রেখে কাজ করা উচিত।

মুখের ব্রণ দূর করার ঔষধের নাম

মুখের ব্রণ দূর করার ঔষধের নাম অনেকেই জানতে চান। ব্রণ দূর করার ইসলামিক উপায় জেনে ও মেনে চলার পাশাপাশি অনেক সময় ঔষধের প্রড়য়োজন হয় বাংলাদেশে মুখের ব্রণ দূর করার জন্য বিভিন্ন ওষুধ এবং ক্রিম পাওয়া যায়, যা ব্রণ দূর করতে কার্যকরী। মুখের ব্রণ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর জন্য সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা করা জরুরি। যদিও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন কিছুই মুখে ব্যবহার বা খাওয়া উপযোগী নয়। এই হেডিং এ আমরা ব্রণ দূর করার কিছু সাধারণ ওষুধ, তাদের কার্যকারিতা, এবং কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব।

১. বেনজয়েল পারঅক্সাইড (Benzoyl Peroxide):

ব্র্যান্ডের নাম: ACNIL, PanOxyl
কার্যকারিতা: বেনজয়েল পারঅক্সাইড একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ব্রণের ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং ব্রণ থেকে সৃষ্ট প্রদাহ কমায়। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযোগী এবং মুখের ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
ব্যবহার পদ্ধতি: সাধারণত দিনে ১-২ বার ব্যবহার করা হয়। প্রথমে ত্বক পরিষ্কার করে ওষুধটি প্রয়োগ করতে হয়।
সতর্কতা: এটি ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক বা লালচে হতে পারে, তাই ত্বকের সংবেদনশীলতার উপর নির্ভর করে ব্যবহার করা উচিত।

২. স্যালিসিলিক এসিড (Salicylic Acid):

ব্র্যান্ডের নাম: Neutrogena Oil-Free Acne Wash, Clean & Clear Acne Spot Treatment
কার্যকারিতা: স্যালিসিলিক এসিড ত্বকের রোমকূপ থেকে ময়লা এবং তেল দূর করে, যা ব্রণের অন্যতম কারণ। এটি ত্বকের মৃত কোষও দূর করতে সহায়ক এবং রোমকূপের প্রদাহ কমায়।
ব্যবহার পদ্ধতি: দিনে ১-২ বার ব্যবহার করা যায় এবং এটি ত্বক পরিষ্কার করার সময় ব্যবহার করতে পারেন।
সতর্কতা: সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা উচিত, কারণ এটি ত্বক কিছুটা শুষ্ক করে দিতে পারে।

আরো পড়ুনঃ ছেলেদের তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন ব্র্যান্ড এর ফেইসওয়াশ ও ক্রীম ভালো

৩. অ্যাডাপালিন (Adapalene):

ব্র্যান্ডের নাম: Differin Gel
কার্যকারিতা: অ্যাডাপালিন একটি রেটিনয়েড যা ব্রণ দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি ব্রণের প্রদাহ কমায় এবং ত্বকের নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।
ব্যবহার পদ্ধতি: রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে পাতলা করে প্রয়োগ করতে হয়।
সতর্কতা: এই ওষুধটি ব্যবহারের পর সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে, কারণ এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয় না।

৪. ক্লিন্ডামাইসিন (Clindamycin):

ব্র্যান্ডের নাম: ClinGel, Cleocin T
কার্যকারিতা: ক্লিন্ডামাইসিন একটি অ্যান্টিবায়োটিক যা ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করতে কার্যকর। এটি মুখের ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ব্রণকে শুকিয়ে দেয়।
ব্যবহার পদ্ধতি: সকালে ও রাতে ত্বক পরিষ্কার করার পর ব্রণের উপর সরাসরি প্রয়োগ করা হয়।
সতর্কতা: এটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা উচিত নয় এবং এটি ব্যবহারের সময় ত্বক শুষ্ক হলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

৫. আজেলাইক এসিড (Azelaic Acid):

ব্র্যান্ডের নাম: Aziderm, Finacea
কার্যকারিতা: আজেলাইক এসিড ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং ব্রণজনিত কালো দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এটি সংবেদনশীল ত্বকের জন্য বেশ উপযোগী।
ব্যবহার পদ্ধতি: দিনে ১-২ বার ত্বকে প্রয়োগ করা হয়।
সতর্কতা: শুরুতে ত্বকে জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে, তবে কয়েকদিনের ব্যবহারে এটি সহনীয় হয়ে যায়।

মুখের ব্রণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ

ব্রণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কখনো কখনো মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শে এই ধরনের ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। কিছু সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ নিচে আলোচনা করা হলো:

১. ডক্সিসাইক্লিন (Doxycycline): ডক্সিসাইক্লিন ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়ক এবং ত্বকের প্রদাহ কমায়। সাধারণত বেশি ব্রণ বা সিরিয়াস ব্রণ সমস্যার ক্ষেত্রে এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়।

২. মিনোসাইক্লিন (Minocycline): মিনোসাইক্লিন ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং ব্রণের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে কার্যকরী। সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শে এর ডোজ নির্ধারণ করা হয়।

৩. সেপট্রিন (Septrin): সেপট্রিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ, যা ব্রণের গুরুতর সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করতে হয়।

মেয়েদের মুখের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করার ক্রিম

মেয়েদের মুখের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করার ক্রিম এর জন্য বিভিন্ন প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। ব্রণ এবং কালো দাগ অনেকের জন্যই সমস্যার কারণ, বিশেষত যাদের ত্বক তৈলাক্ত বা সংবেদনশীল। এই সমস্যাগুলো দূর করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম রয়েছে, যা ত্বকের ধরন ও সমস্যার প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে ব্যবহার করা উচিত। নিচে বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া কিছু জনপ্রিয় ও কার্যকরী ক্রিমের তালিকা এবং তাদের ব্যবহারের নিয়মাবলী দেয়া হলো।

১. গার্নিয়ার লাইট কমপ্লিট ফেয়ারনেস ক্রিম (Garnier Light Complete Fairness Cream)

কার্যকারিতা: গার্নিয়ার লাইট কমপ্লিট ক্রিমটি ত্বকের কালো দাগ ও ব্রণের দাগ দূর করতে কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং লেবুর নির্যাস, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

ব্যবহার পদ্ধতি প্রতিদিন সকালে এবং রাতে মুখ পরিষ্কার করে ক্রিমটি ব্যবহার করা উচিত। এটি ত্বককে সতেজ এবং উজ্জ্বল রাখতে সহায়ক।

২. পন্ডস অ্যাকনে সলিউশন অ্যান্টি-অ্যাকনে ক্রিম (Pond’s Acne Solution Anti-Acne Cream)

কার্যকারিতা: পন্ডসের এই ক্রিমটি বিশেষভাবে ব্রণ সমস্যার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এতে রয়েছে থাইম-টি এসেন্স, যা ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে এবং ব্রণ কমাতে কার্যকর।

ব্যবহার পদ্ধতি: প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ত্বকে প্রয়োগ করতে হবে। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল কমিয়ে ত্বককে মসৃণ রাখে।

৩. হিমালয়া হার্বালস অয়েল কন্ট্রোল অ্যান্টি-অ্যাকনে ক্রিম (Himalaya Herbals Oil Control Anti-Acne Cream)

কার্যকারিতা: হিমালয়া হার্বালসের এই ক্রিমটি প্রাকৃতিক উপাদান যেমন নিম, হলুদ, এবং চন্দনের নির্যাস দিয়ে তৈরি। এটি ত্বকের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করে এবং ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

ব্যবহার পদ্ধতি: দিনে ১-২ বার ত্বকে হালকাভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি ত্বককে শীতল রাখে এবং প্রদাহ কমায়।

৪. নিভিয়া মেন ডার্মো অ্যাকনে ক্লিয়ার ক্রিম (Nivea Men Dermo Acne Clear Cream)

কার্যকারিতা: যদিও এই ক্রিমটি মূলত পুরুষদের জন্য তৈরি, তবে মেয়েরাও এটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে রয়েছে কারনিটিন ও এক্সফোলিয়েটিং উপাদান, যা ত্বকের ময়লা ও অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ব্রণ হ্রাসে সহায়ক।

ব্যবহার পদ্ধতি: প্রতিদিন সকালে ও রাতে ত্বকে প্রয়োগ করতে হবে। এটি ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের কালো দাগ কমায়।

৫. লরিয়াল প্যারিস হোয়াইট পারফেক্ট নাইট ক্রিম (L’Oreal Paris White Perfect Night Cream)

কার্যকারিতা: লরিয়াল প্যারিসের এই নাইট ক্রিমটি মুখের কালো দাগ ও ব্রণের দাগ কমাতে সহায়ক। এতে রয়েছে মেলানিন ভ্যানিশ উপাদান, যা ত্বকের অমসৃণতা দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে।

ব্যবহার পদ্ধতি: প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং কালো দাগ হ্রাস করে।

৬. বিউটি অ্যান্ড গ্লো কেয়ার অ্যাকনে ক্রিম (Beauty & Glow Care Acne Cream)

কার্যকারিতা: বিউটি অ্যান্ড গ্লো ক্রিমটি ব্রণ ও কালো দাগ দূর করার জন্য বাংলাদেশে জনপ্রিয়। এতে রয়েছে চা গাছের নির্যাস এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

ব্যবহার পদ্ধতি: ত্বকের পরিষ্কার করার পর ব্রণের উপরে হালকাভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এটি মুখের কালো দাগ হালকা করতে সহায়ক।

৭. গ্লো অ্যান্ড লাভলি অ্যাডভান্সড মাল্টি ভিটামিন ক্রিম (Glow & Lovely Advanced Multi Vitamin Cream)

কার্যকারিতা: গ্লো অ্যান্ড লাভলি ব্রণজনিত কালো দাগ হালকা করতে কার্যকরী। এতে মাল্টি ভিটামিন সমৃদ্ধ যা ত্বকের মসৃণতা এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

ব্যবহার পদ্ধতি: সকালে এবং রাতে ত্বকে প্রয়োগ করা যায়। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং কালো দাগ হ্রাস করতে সাহায্য করে।

৮. ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি অ্যান্টি-মার্কস ক্রিম (Fair & Lovely Anti-Marks Cream)

কার্যকারিতা: ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি অ্যান্টি-মার্কস ক্রিমটি কালো দাগ ও ব্রণের দাগ দূর করতে বিশেষভাবে তৈরি। এতে রয়েছে প্রো ভিটামিন বি৩, যা ত্বকের দাগ হালকা করতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সহায়ক।

ব্যবহার পদ্ধতি: দিনে ২ বার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি মুখের কালো দাগ কমাতে সহায়ক।

৯. মডেস এসেন্স হোয়াইটনিং ক্রিম (Modes Essence Whitening Cream)

কার্যকারিতা: মডেস এসেন্স ক্রিমটি ব্রণ ও কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে পিপ্তা-ব্ল্যানক্স উপাদান যা ত্বককে উজ্জ্বল রাখে এবং দাগ কমায়।

ব্যবহার পদ্ধতি: প্রতিদিন সকালে ও রাতে মুখে প্রয়োগ করতে হবে। এটি ত্বক উজ্জ্বল রাখে এবং কালো দাগ দূর করতে সহায়ক।

১০. বায়োডার্মা সেবিয়াম গ্লোবাল ইনটেনসিভ ক্রিম (Bioderma Sebium Global Intensive Cream)

কার্যকারিতা: বায়োডার্মা সেবিয়াম গ্লোবাল ক্রিমটি ত্বকের ব্রণ এবং কালো দাগ দূর করতে কার্যকর। এটি ত্বকের তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং প্রদাহ কমায়।

ব্যবহার পদ্ধতি: দিনে একবার বা দুইবার ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ব্রণের দাগ হালকা করতে সহায়ক।

ব্রণ-দূর-করার-ইসলামিক-উপায়-3

আজকের পোস্ট বিষয়ক সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

১. ইসলামে ব্রণ দূর করার জন্য কি বিশেষ কোনো দোয়া আছে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু দোয়া রয়েছে, যেমন: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল উফিয়া” অর্থাৎ “হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থতা দিন।”

২. কোন নামাজ বা সুরা ব্রণ দূর করতে সহায়ক?

উত্তরঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, ও সুরা নাস নিয়মিত পড়লে আল্লাহর রহমতে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা কমতে পারে।

৩.কালোজিরা কি ব্রণের জন্য কার্যকর?

উত্তরঃ হ্যাঁ, হাদিসে কালোজিরার উপকারিতা বর্ণিত আছে। কালোজিরা খেলে বা মুখে ব্যবহার করলে এটি ব্রণ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

৪. ওজু করলে কি ত্বকের সমস্যা দূর হয়?

উত্তরঃ ওজু করলে ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং নিয়মিত ওজু মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে, যা ব্রণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

আমাদের শেষকথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা জানলাম ব্রণ দূর করার ইসলামিক উপায়, ৭ দিনে ব্রণ দূর করার উপায় ও রুটিন, ব্রণ দূর করার ঔষধ এর পাশাপাশি বেশ কিছু ক্রিমের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশাকরি বুিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন এবং ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী ত্বকের পরিচর্চা নিলে আপনি খুব সহজেই নিজেই নিজের ত্বকের পরিবর্তন দেখতে পারবেন। 

এইরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কারণ আমরা আমদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরণের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আবির ইনফো টেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url