সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতি - গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে আমরা অনেকেই জানতে চায়। যেহেতু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টির একটি পুরো কম্বোপ্যাক বলা যেতে পারে এই সূর্যমুখীর বীজকে। এছাড়া সবথেকে বড় ভূমিকা রাখে গর্ভাবস্থার মায়েদের। আজকে আমরা সূর্যমুখীর বীজ নিয়ে বিস্তারিত জানবো।
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো, সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতি, গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা, সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অপকারিতা, এই সূর্যমুখী বীজ কোথায় পাবেন সকল কিছু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশাকরি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ে উপকৃত হবেন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতি - গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
- সূর্যমুখী বীজের ধরণসমূহ
- সূর্যমুখী বীজের ভরপুর পুষ্টিগুন
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতি
- সূর্যমুখী বীজের ভিন্ন রেসিপি
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
- সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় অন্যান্য বীজ খাওয়ার উপকারিতা
- আজকের পোস্ট বিষয়ক সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
- আমাদের শেষকথা
সূর্যমুখী বীজের ধরণসমূহ
সূর্যমুখী বীজের ধরণসমূহ আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানি না। বেশিরভাগ আমরা সূর্যমুখী চিনি কিন্তু এই সূর্যমুখী আসলে কত ধরণের তা অনেকেরই জানা নেই। আজকের এই হেডিং এ জানবো সূর্যমুখী বীজের কয় ধরণের জাত রয়েছে এবং সেগুলো কি কি কাজে লাগে সকল কিছু চলুন জেনে আসি-
কালো তৈল সূর্যমুখী বীজ: এই বীজগুলো সাধারণত কালো রঙের হয়ে থাকে। আমরা যে সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করি তা মূলত এই কালো বীজ থেকে। এই বীজ থেকে উন্নত মানের তেল পাওয়া যায় যা আমাদের রান্নার কাজে ব্যবহার হয়। আবার এই কালো বীজ পাখির হিসেবেও ব্যবহার হয়।
মিষ্টান্ন সূর্যমুখী বীজ: এই বীজগুলো দেখতে সাধারণত কালো এবং সাদা ডোরাকাটা হয়। এই বীজ খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো আপনি খোসাসহ খেতে পারবেন। এই বীজ আপনি সরাসরি খেতে পারবেন। এছাড়া অন্য যে কোন খাবারের সাথে সংযোজন করতে পারবেন। বিশেষকরে স্ন্যাক্স জাতীয় খাবারের সাথে সংযোজন করতে পারবেন।
হুলড সানফ্লাওয়ার সীডস: এগুলোও মূলত কালো ও সাদা ডোরাকাটা হয়। এগুলো আপনি সরাসরি খেতে পারবেন তবে এগুলো আপনাকে খোসা ছাড়িয়ে খেতে পারবেন। যেমন: সালাদ, বেকড পণ্যের মতো খাবারে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
সূর্যমুখী বীজের উন্নত জাত: ১।ডি এস-
২। বারি সূর্যমুখী-২
সূর্যমুখী বীজের ভরপুর পুষ্টিগুন
সূর্যমুখী বীজের ভরপুর পুষ্টিগুন অর্থাৎ পুষ্টির পাওয়ার হাইজ রয়েছে। যেখান থেকে আমরা ভিটামিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, শর্করা,ফাইবারসহ আরো অনেক ধরণের পুষ্টিগুন পাচ্ছি। এছাড়াও এই সূর্যমুখী বীজ আমাদের শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যার ফলে আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল কোষগুলো ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। সূর্যমুখী বীজে যে শুধু ভিতামিন, আয়রনই রয়েছে এমন নয় এখানে রয়েছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন এবং নিয়াসিন।
আরো পড়ুনঃ পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় - পাইলস এর ফোলা কমানোর উপায়
যা আমাদের শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চলুন জেনে নেয়া যাক আসলে সূর্যমুখীতে ভরপুর পুষ্টিগুণের কি কি অংশ কতটুকু থাকে-
পুষ্টি উপাদান | পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ প্রতি আউন্স (২৮ গ্রাম) |
---|---|
ক্যালোরি | ১৬৩ ক্যালোরি থাকে |
প্রোটিন | ৫.৫ গ্রাম |
ফ্যাট | পলিআনস্যাচুরেটেড এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট সহ ১৪ গ্রাম |
শর্করা | ৬.৫ গ্রাম |
ফাইবার | ৩ গ্রাম |
ভিটামিন ই | দৈনিক প্রয়োজনীতার ৩৭% |
সেলেনিয়াম | দৈনিক প্রয়োজনীতার ৩২% |
ম্যাগনেসিয়াম | দৈনিক প্রয়োজনীতার ৯% |
কপার | দৈনিক প্রয়োজনীতার২৬% |
ম্যাঙ্গানিজ | দৈনিক প্রয়োজনীতার ৩০% |
ভিটামিন বি৬ | প্রতি ১০০ গ্রামে ১.৩৪গ্রাম |
ফোলেট | ২২৭ মাইক্রোগ্রাম |
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতি
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান কীভাবে খাবেন। আজকের এই হেডিং এ জানবো কীভাবে সূর্যমুখী বীজ খাবেন। আমরা সকলেই জানি সূর্যমুখী বীজ আমাদের জন্য অনেক উপকারি। রোজকার খাদ্যতালিকায় সূর্যমুখী বীজ অল্প একটু রাখুন। বাজারে মূলত ২ ধরণের বীজ পাওয়া যায়। একটি হলো খোলস বা সেল সহ আরেকটি হলো সেল ছাড়া। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে সূর্যমুখী বীজ খাওয়া হয়-
-
পোড়ানো সূর্যমুখী বীজ: এটি সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। বীজগুলো শুকনো তাওয়ায় হালকা পোড়ান।
-
সালাদে মিশিয়ে: সূর্যমুখী বীজ সালাদে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি সালাদের স্বাদ বাড়াবে।
-
স্মুথিতে মিশিয়ে: স্মুথিতে সূর্যমুখী বীজ মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি স্মুথির পুষ্টিমান বাড়াবে।
-
দইয়ের সাথে: দইয়ের সাথে সূর্যমুখী বীজ মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি খুবই সুস্বাদু।
কাঁচা বীজ
কাঁচা সূর্যমুখী বীজ সরাসরি খাওয়া যেতে পারে। এটি সহজ এবং দ্রুত। বীজগুলো ভালভাবে ধুয়ে নিন এবং খোসা ছাড়িয়ে নিন। কাঁচা বীজে প্রাকৃতিক পুষ্টি থাকে যা খুবই উপকারী।
রোস্টেড বীজ
রোস্টেড সূর্যমুখী বীজ খেতে মজাদার এবং পুষ্টিকর। প্রথমে বীজগুলো ভালভাবে ধুয়ে নিন। একটি প্যানে হালকা তাপে বীজগুলো রোস্ট করুন। রোস্টেড বীজে অতিরিক্ত স্বাদ যুক্ত হয় যা খাওয়া সহজ করে।
সূর্যমুখী বীজের ভিন্ন রেসিপি
সূর্যমুখী বীজের ভিন্ন রেসিপির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত আবার অনেকেই পরিচিত নয়। আমরা সকলেই জানি সূর্যমুখী বীজে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই পুষ্টিগুণের আশায় আমরা সূর্যমুখীর বীজকে বিভিন্ন ভাবে গ্রহণ করতে পারি। সূর্যমুখী বীজের ভিন্ন রেসিপি এই সময়ে বেশ উপকারী হতে পারে। আমরা ওপরে জেনেছি সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতি। এখন আমরা বিস্তারিত জানবো কিছু জনপ্রিয় রেসিপি। নিচে কিছু জনপ্রিয় রেসিপি দেওয়া হল:
স্মুদিতে সূর্যমুখী বীজ মিশিয়ে
সকালের নাস্তার জন্য সূর্যমুখী বীজের স্মুদি বেশ উপকারী। স্মুদিতে সূর্যমুখী বীজ যোগ করা স্বাস্থ্যের জন্য এক অন্যরকম উপকারিতা পাবেন। আপনার শরীরের পানীয়ের সামগ্রিক চাহিদা মেটাতে স্মুদিতে সূর্যমুখীর বীজ যোগ করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও শরীরে ওজন কমাতে এই স্মুদি অনেক সাহায্য করে। কারণ স্মুদি এমনিতেই কঠিন ধরণের তরল। যা খাওয়ার ফলে শরীরে বেশি পরিমাণে খাবার প্রবেশ করতে পারবে না। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক স্মুদিতে সূর্যমুখী বীজ মিশানোর পদ্ধতি-
সূর্যমুখী বীজ দিয়ে স্মুদি বানানোর উপকরণসমূহ:
১ কাপ দুধ
১টি কলা
২ টেবিল চামচ সূর্যমুখী বীজ
১ টেবিল চামচ মধু
সূর্যমুখী বীজ দিয়ে স্মুদি বানানোর পদ্ধতি:
- প্রথমত সব উপকরণ গুলোকে একটি ব্লেন্ডারে দিন।
এরপর ভালো করে উপকরণগুলোকে সময় নিয়ে ব্লেন্ড করুন।
তারপর একটি গ্লাসে ঢেলে স্মুদিটি পান করুন।
সালাদে সূর্যমুখী বীজ মিশিয়ে
সালাদে সূর্যমুখী বীজ অন্তর্ভুক্ত করা আপনার খাবারের স্বাদ এবং পুষ্টির মান উভয়ই উন্নত করার একটি দুর্দান্ত উপায়। আপনার খাদ্যতালিকায় এই সালাদ রাখলে আপনার শরীরে পেশির সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে। শুধু এই সালাদই নয় সকল প্রকার উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন যুক্ত তৈরিকৃত সালাদ আমাদের শরীরে অনেক উপকারে আসে। তাহলে চলুন জেনে নিই সালাদে সূর্যমুখী বীজ মিশানোর নিয়ম-
সূর্যমুখী বীজ দিয়ে সালাদ বানানোর উপকরণসমূহ:
- ১ কাপ লেটুস পাতা
- ১টি টমেটো
- ১/২ কাপ সূর্যমুখী বীজ
- ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
- লবণ ও গোলমরিচ স্বাদমতো
সূর্যমুখী বীজ দিয়ে সালাদ প্রস্তুতির পদ্ধতি:
-
প্রথমে একটি পাত্রে কিছু লেটুস পাতা ও একটি বা আপনার পরিমাণমতো টমেটো টুকরো করুন।
- একটি বড় বাটিতে সব উপকরণ গুলোকে ভালোভাবে মেশান।
-
এরপর ওই পাত্রে উক্ত উপকরণগুলোর সাথে অলিভ অয়েল, লবণ ও গোলমরিচ দিয়ে দিন।
-
এখন সবগুলোকে ভালোভাবে মিশাতে থাকেন ।
-
কিছু মেশানোর পরই আপনার সালাত প্রস্তুত হয়ে যাবে। এখন আপনি চাইলে পরিবেশন করতে পারেন। এই সালাদ স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভালো।
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
পুষ্টিগুণে ভরপুর:
ভিটামিন: সূর্যমুখী বীজ ভিটামিন ই এর একটি চমৎকার উৎস, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এগুলিতে বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন রয়েছে, যেমন: B6 এবং ফোলেট, যা শক্তি বিপাক এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
খনিজ পদার্থ: এই সূর্যমুখী বীজগুলি ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, যা পেশীর কার্যকারিতা এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় এবং সেলেনিয়াম, যা প্রদাহ কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা পালন করে।
স্বাস্থ্যকর চর্বি: সূর্যমুখী বীজ স্বাস্থ্যকর অসম্পৃক্ত চর্বি, বিশেষ করে লিনোলিক অ্যাসিড (একটি ওমেগা -6 ফ্যাটি অ্যাসিড), যা স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে: স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন ই এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সংমিশ্রণ রক্তচাপ কমিয়ে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এবং ধমনীতে প্লাক জমা হওয়া রোধ করে হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।
প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে: সূর্যমুখী বীজের ভিটামিন ই এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমায়, যা দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস এবং এমনকি কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে: সূর্যমুখী বীজে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা শক্তিশালী হাড় বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলিতে ফসফরাসও রয়েছে, আরেকটি খনিজ যা হাড়ের ঘনত্ব এবং গঠনে অবদান রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: সূর্যমুখী বীজে পাওয়া সেলেনিয়াম শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে ইমিউন সিস্টেমকে সমর্থন করে। বীজে জিঙ্কও থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়: ভিটামিন ই ত্বকের কোষগুলিকে UV ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, ত্বকের পুনর্জন্মকে প্রচার করে এবং বার্ধক্যজনিত লক্ষণ প্রতিরোধ করে ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সূর্যমুখী বীজের স্বাস্থ্যকর চর্বি ত্বককে ময়েশ্চারাইজড এবং কোমল রাখতে পারে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: সূর্যমুখী বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে, এই দুটিই আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করে, সামগ্রিক ক্যালোরি গ্রহণ কমায়। এটি তাদের একটি তৃপ্তিদায়ক খাবার তৈরি করে যা একটি স্বাস্থ্যকর ওজন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।
মেজাজ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়: সূর্যমুখী বীজ ট্রিপটোফ্যানের একটি ভাল উৎস, একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা সেরোটোনিন তৈরি করতে সাহায্য করে, একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা মেজাজ উন্নত করে এবং উদ্বেগ কমায়। সূর্যমুখী বীজের বি-ভিটামিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকেও সমর্থন করে এবং জ্ঞানীয় পতনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হজমের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: সূর্যমুখী বীজের ফাইবার নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে স্বাস্থ্যকর হজমে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়া মায়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সূর্যমুখী বীজ খাওয়া মায়ের ও শিশুর জন্য বেশ উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ফোলেট, প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত সূর্যমুখী বীজ খাওয়া মায়ের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। সূর্যমুখী বীজের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গর্ভের শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। মায়েদের পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এটি একটি চমৎকার খাদ্য উপাদান। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-
শিশুর বিকাশে মায়ের সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা:
সূর্যমুখী বীজে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে।
-
ফোলিক অ্যাসিড: শিশুর মস্তিষ্কের গঠন ও বিকাশে সহায়তা করে।
-
আয়রন: শিশুর রক্তের উন্নতিতে সহায়ক।
-
ম্যাগনেসিয়াম: শিশুর হাড়ের গঠন ও বিকাশে ভূমিকা রাখে।
-
প্রোটিন: শিশুর কোষের বৃদ্ধি ও মেরামতে সহায়তা করে।
-
ফোলেট: শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাতৃ স্বাস্থ্যে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা:
-
প্রোটিন: মায়ের শরীরের পেশী ও টিস্যুর গঠনে সহায়ক।
-
ফাইবার: মায়ের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
-
ভিটামিন সি: মায়ের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
-
ভিটামিন ই: মায়ের ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
সূর্যমুখী বীজে আরও রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা মায়ের হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে, যা মায়ের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক।
আরো পড়ুনঃ এলার্জিতে নিমপাতার ব্যবহার
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অপকারিতা
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ারও বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে। সূর্যমুখী বীজ বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় খাবার, যা খেতে বাদামের মতো স্বাদ এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন এবং বিভিন্ন পুষ্টিতে সমৃদ্ধ হওয়ার মতো স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য পছন্দ করে। যাইহোক, বেশিরভাগ খাবারের মতো, সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার কিছু খারাপ দিক রয়েছে। যদিও এগুলি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অংশ হতে পারে, তবে কিছু অসুবিধাগুলি বিবেচনা করতে হবে, বিশেষ করে যখন অতিরিক্ত খাওয়া হয়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে-
এলার্জির সমস্যা হয়ে থাকে: যদিও চিনাবাদাম বা গাছের বাদামের ফলে যে অ্যালার্জি হয়, আর সূর্যমুখী বীজের ফলে যে অ্যালার্জি হয় তা সাধারণ নয়। সূর্যমুখী বীজে অ্যালার্জি বিদ্যমান। সূর্যমুখী বীজের অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিরা সূর্যমুখী বীজ গ্রহণ বা সংস্পর্শে আসার পরে চুলকানি, ফোলাভাব, আমবাত, এমনকি অ্যানাফিল্যাক্সিসের মতো লক্ষণগুলি অনুভব করতে পারে। যদি কেউ সূর্যমুখী বীজের প্রতি অ্যালার্জি বা সংবেদনশীল হয়, তাহলে এর পরিণতি গুরুতর হতে পারে এবং চিকিৎসার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে।
অতিরিক্ত ফসফরাস গ্রহণের ঝুঁকি: সূর্যমুখী বীজ ফসফরাসের একটি ভাল উৎস, শক্তিশালী হাড় এবং দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয় একটি খনিজ। যাইহোক, প্রচুর পরিমাণে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে। সময়ের সাথে সাথে, উচ্চ ফসফরাস মাত্রা হাড় থেকে ক্যালসিয়াম বের করে দিতে পারে, অস্টিওপরোসিস এবং অন্যান্য হাড়-সম্পর্কিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। এই ভারসাম্যহীনতা কিডনির কার্যকারিতাকেও প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে।
আরো পড়ুনঃ শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসার ৭টি লক্ষণ ও অভিভাকের করণীয়
দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে: ছোট বাচ্চাদের বা যারা বীজ খেতে অভ্যস্ত নয় তাদের জন্য, সূর্যমুখীর বীজ শ্বাসরোধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যদি অসাবধানে বা বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়। বীজের ছোট আকার, বিশেষ করে যখন খোসার সাথে খাওয়া হয়, ভালভাবে চিবানো না হলে সহজেই দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
হজমে সমস্যা হতে পারে: সূর্যমুখী বীজ ফাইবার সমৃদ্ধ, যা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে হজমের জন্য উপকারী হতে পারে। যাইহোক, অনেক বেশি সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অস্বস্তি হতে পারে। যেমন: ফোলাভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া। সূর্যমুখী বীজের শক্ত খোসা, যদি সঠিকভাবে অপসারণ না করা হয়, তা হজম করাও কঠিন হতে পারে, যা অন্ত্রে বাধার মতো সম্ভাব্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করে।
দাঁতের সমস্যা হতে পারে: সূর্যমুখীর বীজ খাওয়া বিশেষ করে খোসার জাত, দাঁতের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। আপনার দাঁত দিয়ে শক্ত খোসা ফাটানোর কাজটি এনামেল নষ্ট করে দিতে পারে, যার ফলে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং গহ্বর বা দাঁতের ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বেশি থাকে। ঘন ঘন বা অনুপযুক্তভাবে শাঁস চিবানো মাড়ির ক্ষতি করতে পারে, অস্বস্তির কারণ হতে পারে এবং সম্ভবত সময়ের সাথে সাথে মৌখিক স্বাস্থ্য সমস্যায় অবদান রাখতে পারে।
গর্ভাবস্থায় অন্যান্য বীজ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় অন্যান্য বীজ খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে বিভিন্ন ধরনের বীজ খাওয়া খুবই উপকারী। সূর্যমুখী বীজ ছাড়াও চিয়া বীজ ও ফ্ল্যাক্স সিড সহ আরো অনেক বীজ রয়েছে যেগুলো গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এদের মধ্যে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে যা মায়েদের ও শিশুর সুস্বাস্থ্যে সহায়ক। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় অন্যান্য বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
চিয়া বীজ: চিয়া বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা গর্ভবতী মহিলাদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া এতে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসও রয়েছে। চিয়া বীজ পানিতে মিশ্রিত হলে একটি জেলি মত মিশ্রণ সৃষ্টি করে, যা পেটের জন্য খুব ভালো। এটি রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক এবং চর্বি ঝরাতে সহায়ক।
ফ্ল্যাক্স বীজ: ফ্ল্যাক্স বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা গর্ভাবস্থায় হজমের সমস্যা দূর করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও ফ্ল্যাক্স বীজের মধ্যে লিগন্যানস নামক যৌগ আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ইস্ট্রোজেনিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
কুমড়ার বীজ: কুমড়ার বীজে রয়েছে জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা শিশুর সঠিক বিকাশে সহায়ক হতে পারে। এটি হেমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। কুমড়ার বীজে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম আছে, যা মেজাজ উন্নত করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। যেহেতু কুমড়ার বীজে জিঙ্ক রয়েছে যা অনাক্রম্যতা শক্তিশালী করতে সহায়ক।
হেম্প বীজ: হেম্প বীজে প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হরমোনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সহায়ক। এছাড়াও হেম্প বীজে আমাইনো অ্যাসিড বিদ্যমান, যা শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। এতে গামা-লিনোলেনিক অ্যাসিড (GLA) থাকে, যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক এবং হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে পারে।
সিসাম বীজ (তিলের বীজ): এই বীজে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক এবং ফাইবার রয়েছে। গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন বেশি থাকে, তাই তিলের বীজ হতে পারে একটি ভাল সাপ্লিমেন্ট। এছাড়াও এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
কুইনোয়া: যদিও এটি কণিক হিসেবে বিবেচিত হয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রোটিন উৎস। কুইনোয়া ভিটামিন বি, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবারে পরিপূর্ণ। এটি গর্ভাবস্থায় মায়েদের শক্তি সরবরাহ করতে সহায়ক।
আজকের পোস্ট বিষয়ক সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
১। সূর্যমুখী বীজ কি গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিরাপদ?
উত্তরঃ সূর্যমুখী বীজ গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং পুষ্টিকর। এগুলি ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর।
২।গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা কি?
উত্তরঃ সূর্যমুখী বীজে রয়েছে ভিটামিন ই, ফোলেট এবং প্রোটিন যা মায়ের এবং শিশুর সুস্বাস্থ্যে সহায়ক।
৩। সূর্যমুখী বীজ কীভাবে খাবেন?
উত্তরঃ সূর্যমুখী বীজ স্ন্যাকস হিসেবে সরাসরি খাওয়া যায় বা সালাদ ও স্মুদিতে ব্যবহার করা যায়।
৪। সূর্যমুখী বীজ কি গর্ভাবস্থায় শক্তি বৃদ্ধি করে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সূর্যমুখী বীজে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা শক্তি বৃদ্ধি করে।
৫।কতটুকু সূর্যমুখী বীজ খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ প্রতিদিন এক মুঠো (প্রায় ২৮ গ্রাম) সূর্যমুখী বীজ খাওয়া ভালো।
আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা জানলাম সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পদ্ধতি, গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা, সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার অপকারিতা, কীভাবে খাবেন সকল কিছু নিয়ে বিস্তারিত জেনেছি। গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়া অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। এতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা মায়ের ও সন্তানের জন্য ভালো। নিয়মিত খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ অন্তর্ভুক্ত করুন এবং সুস্থ থাকুন।
এইরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কারণ আমরা আমদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরণের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
আবির ইনফো টেকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url